ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়ার কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় নওগাঁয় ১৫ থেকে ২০ দিন পরে আম পাকে। জেলায় আমের ভরা মৌসুম ধরা হয় মে মাসের শুরু থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এবার নওগাঁয় ভরা মৌসুমে আমের দাম কম ছিল। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সরজুমিনে গিয়ে নওগাঁর শাপাহার সদর জিরো পয়েন্ট সবচেয়ে বড় আমের বাজার-হাট ঘুরে দেখা গেছে, এখন বাজারে আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও বারি-৪ আম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারিতে মানভেদে আম্রপালি ৭০ থেকে ১৪০ টাকা, বারি-৪ আম ৬০ থেকে ৯০ টাকা এবং ব্যানানা ম্যাঙ্গো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভরা মৌসুমে আম্রপালি ৩০ থেকে ৬০, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ৪০ থেকে ৭০ ও বারি-৪ আম ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বেলা ১০-১১টার দিকে হাটে কথা হয় সাপাহারের ফুটকইল এলাকার আমচাষি ও ব্যবসায়ী এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আমের বাজার বাড়তির দিকে।
বিশেষ করে নওগাঁ সবচেয়ে জনপ্রিয় আম্রপালি আমের দাম বেশি বেড়েছে।
এক-দুই সপ্তাহ আগেও এই আম চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। সেই আম এখন বাজারে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে আমের আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। নওগাঁর বাজারে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আম পাওয়া যায়। শেষ মুহূর্তে দাম আরও বাড়বে।
পত্নীতলার দিবর এলাকা থেকে আসা আমচাষি জাহাঙ্গীর আলম মাঝারি মানের আম্রপালি আমের দাম চাচ্ছিলেন মণপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। দর-কষাকষি চলছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের ব্যাপারী শাহজাহান আলীর সঙ্গে। শেষে বিক্রি করেন ৪ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে এই মানের আমের দাম ছিল আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা।
আম্রপালি আম এখন শেষের পথে। এই আমের দাম আরও বাড়বে কিছুদিন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নওগাঁর বাজারে আম্রপালি পাওয়া যাবে। ব্যানানা ও বারি-৪ আগস্টজুড়েই পাওয়া যাবে।ঢাকার আম ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি আম বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় নওগাঁর আম্রপালির স্বাদ সবচেয়ে ভালো। এখানকার আম ভোক্তারা একবার খেলে বারবার খেতে চান।
এখানে ব্যানানা ম্যাঙ্গোও অনেক উৎপাদিত হচ্ছে। বিদেশের বাজারে আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গোর চাহিদা বেশ ভালো। তিনি সব সময় ভোক্তাদের সেরা আম দেওয়ার চেষ্টা করেন। মৌসুমের শেষ দিকে হওয়ায় আমের দাম বেড়েছে।
আড়তদার কার্তিক সাহা বলেন, ‘দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাজারে এখন আম প্রায় নেই। এখন শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাজারে আম আছে। এখন বাজারে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনলাইনের আম বিক্রেতারা নেমেছেন বেশি। আমের দামও তাই বেশি। অনলাইন আম বিক্রেতারা বাজার থেকে ভালো মানের আম কেনেন। ভালো আমের দাম সব সময়ই বেশি থাকে।
এখন মাঝারি মানের আম প্রতিমণ সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে ভালোটার দাম ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।চলতি বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৭৮ টন হিসাবে জেলায় আম সংগ্রহের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টন।
চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার আম-বাণিজ্য হতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
নওগাঁ #