উত্তর জনপদের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলতি অর্থ বছরে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধান ও রবিশস্য চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমন ধানের শেষ পরিচর্যা ও কাটামাড়াই শেষে এসব জমিতে রবিশস্য চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। ধানের পাশাপাশি এলাকায় গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা ও শীতকালীন শাকসবজি চাষের জন্য উপযোগী বরেন্দ্র অঞ্চলের উর্বর কৃষি জমি। চাষাবাদে ভোগান্তি নিরসনের জন্য কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত সার মজুদ ও বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি রাসায়নিক সার নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এসব গুজবে কান না দিয়ে যখন যেটুকু প্রয়োজন সে পরিমাণ সার কেনার পরামর্শ দেন কৃষকদের। তারা বলেন, অতিরিক্ত সার কেনার প্রয়োজন নেই।
এ উপজেলায় সারের কোন ঘাটতি নেই। উপজেলার জয়পুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম, হেরেমনগর গ্রামের কৃষক শরিফ উদ্দীন, গোপালপুর গ্রামের কৃষক উকিল, শিবরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বারসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সারের কোন সংকট নেই, তাদের প্রয়োজনে যখন যেটুকু সার প্রয়োজন তা তারা সময় মতই পেয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়াও বাড়তি হিসেবে পেয়েছেন প্রণোদনার সার-বীজ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমের দেয়া তথ্য মতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ২ হাজর ৭০ হেক্টর জমিতে আলু, ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম, ২৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি এবং ২৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রার আলোকে নির্বিঘ্নে রাসায়নিক সার সরবরাহের লক্ষ্যে মহাদেবপুর উপজেলায় পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসে ইউরিয়া ২৮৯ মেট্রিক টন, টিএসপি ১৫৬ মেট্রিক টন, ডিএপি ২৬০ মেট্রিক টন এবং এমওপি ২১২ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে। অক্টোবর মাসের শেষে বরাদ্দের মধ্য থেকে ইউরিয়া ১৭৮.৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ৮৫.৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৬৭.৭৫ মেট্রিক টন এবং এমওপি ১৪৩.৬ মেট্রিক টন উত্তোলন করা হয়েছে।
এ সময় ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া ৩৫৩.৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ৫৭.৯ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৫৪.৭ মেট্রিক টন এবং এমওপি ৩০০.৫ মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। উপজেলায় রবি শস্য ও বোরো ধান চাষাবাদের জন্য প্রতি মাসে পর্যাপ্ত সারের বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে আগামী নভেম্বর মাসে ইউরিয়া ৬২১ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪৮০ মেট্রিক টন, ডিএপি ৬৬৭ মেট্রিক টন, এমওপি ৪২৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে।
ডিসেম্বর মাসে ইউরিয়া ৯২৪ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪৮০ মেট্রিক টন, ডিএপি ১০৮০ মেট্রিক টন, এমওপি ৬৪০ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে। জানুয়ারি মাসে ইউরিয়া ১ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন, টিএসপি ৩৬০ মেট্রিক টন, ডিএপি ১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন, এমওপি ৬৭৪ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে। ফেব্রæয়ারি মাসে ইউরিয়া ১ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ১৭৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ৫৭০ মেট্রিক টন, এমওপি ২৮৮ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে।
উপরোক্ত তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে চলতি রবি শস্য ও বোরো ধান চাষে রাসায়নিক সারের ঘাটতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
এ ছাড়াও চলতি মাসে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে রবিশস্য চাষাবাদে প্রণোদনা পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৪০ জন কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ জানান, চলতি রবিশস্য মৌসুমে এ উপজেলায় প্রতিমাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার বরাদ্দ রয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি সার নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। কৃষকদের গুজবে কান না দিয়ে, যখন সার দরকার তখন সার ক্রয়ের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
অযথা অগ্রীম সার কেনার দরকার নেই। কৃষকদেরকে ডিলার পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত ম‚ল্যে ক্যাশ মেমোসহ সার ক্রয়ের অনুরোধ জানান।
নওগাঁ#

