নূর মোহাম্মদ সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক-
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষি জমি ও বসতভিটা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে কৃষকের বীজতলা, সবজি বাগান, মাছের পুকুর ও আমন ধানের ক্ষেতসহ প্রায় ৫ হাজার বিঘা আবাদি জমি তলিয়ে গেছে।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের তফেল মেম্বারের বাড়ির পাশে তিস্তা নদীর তিনটি নতুন শাখা নদী সৃষ্টি হওয়ায় শতাধিক বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। বন্যার ঘোলাপানি, পলিকাদা সহ ময়লা আবর্জনা জমে যাওয়ায় সদ্য রোপিত আমন ধানের ক্ষেত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় এক হাজারের অধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক কৃষক এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। এখন ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণ পরিশোধ ও কিস্তির চাপের কারণে তারা মানসিক কষ্টে ভুগছেন। দীর্ঘদিন জমে থাকা পানির কারণে মাটি শক্ত হয়ে পড়ায় আগামী মৌসুমে জমি প্রস্তুত করতেও বড় ধরনের সমস্যা হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেল ৪টার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুজ্জামান ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্নাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাগুলো শোনেন এবং দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “আমাদের রোপা আমনের ধান কাদা ও পলির নিচে তলিয়ে গেছে। বছরের পর বছর সঞ্চিত টাকা এই বন্যায় হারিয়ে যাচ্ছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দুঃসময়ে পড়ব।”
স্থানীয় কৃষক হযরত আলী বলেন, “বন্যার ফলে আমাদের জমি অনেকাংশে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এক বছরের পরিশ্রম মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। সরকারি সহায়তা ছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।”
কৃষক আব্দুর রহিম জানান, “শাখা নদীর হঠাৎ পরিবর্তন ও বন্যায় শতাধিক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা কষ্ট করে জীবন চালাই, এখন এই ক্ষতি আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। সরকার থেকে সাহায্য ও পুনর্বাসন চাই।”
কৃষক সুবল সাহা জানান, “আমাদের পরিবারের জীবিকা ধান-চালের ওপর নির্ভরশীল। ফসল নষ্ট হলে আগামী মৌসুমে কিভাবে চলব, বুঝে উঠতে পারছি না।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মীর হাসান আল বান্না বলেন, “আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে আছি। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। সবাই মিলে আবারও সবুজ বিপ্লব গড়ে তুলতে পারব। ”তিনি আরও জানান, “উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য দ্রুত আর্থিক সহায়তা, বীজ, সার ও আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “বন্যায় কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষি জমি ও বসতভিটায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে। কৃষি দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, “বন্যার পানি দ্রুত সরে গেলে উন্নতমানের বীজ ও সার সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আগামী মৌসুমের ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।”