দীর্ঘ প্রবাসজীবনের সংগ্রাম শেষে এখন ন্যায়বিচারের আশায় দিন গুনছেন প্রয়াত বিবিসি সাংবাদিক গোলাম কাদিরের স্ত্রী নাজমা কাদের। একসময় সাংবাদিকতার গৌরবময় পরিবারের সদস্য হিসেবে যিনি ছিলেন সম্মানিত ও সচ্ছল, এখন তিনি পরিণত হয়েছেন অন্যায়ের শিকার এক অসহায় নারীতে।
লন্ডনে কাটানো জীবনের প্রতিটি ধাপ ছিল নাজমা কাদেরের জন্য পরিশ্রম ও ত্যাগের। কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থে তিনি বাংলাদেশে নিজের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগ করেন। ক্রয় করেন ফ্ল্যাট, জমি ও কিছু মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু সেই সম্পদই আজ তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাজমা কাদেরের অভিযোগ, বাংলাদেশে তাঁর ফ্ল্যাট বিক্রির এক কোটি চল্লিশ লাখ টাকা তাঁর সৎ বোন সনিয়া, বোন জামাই সোহেল এবং সৎ মা-বাবা মিলে প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়াত স্বামী গোলাম কাদিরের পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বড় গোপালদী গ্রামের ৯০ শতক জমি ও তাঁর নামে ক্রয় করা আরও কয়েক বিঘা জমিও তারা দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বহুবার পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা, অনুরোধ ও সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো ফল মেলেনি বলে জানান নাজমা কাদের। বরং উল্টোভাবে তাঁকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি নিরুপায় একজন নারী, কিন্তু ভেঙে পড়িনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি লড়ছি। আমার স্বামীর মর্যাদা, আমার অধিকার ও সত্যের পক্ষে আমি দাঁড়াতে চাই।”
গোলাম কাদির ছিলেন বিবিসির সঙ্গে যুক্ত একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। সততা, নীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে তিনি দেশে-বিদেশে সম্মান অর্জন করেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ও মর্যাদাকে অসম্মান করা হচ্ছে—এটাই নাজমা কাদেরের কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক।
দশমিনা অঞ্চলের বহু মানুষ নাজমা কাদেরের এই অবস্থার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষায়, একজন নারী যদি প্রবাসে থেকেও নিজের সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার না পান, তবে তা সমাজ ও প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক।
একজন স্থানীয় নাগরিক বলেন, “গোলাম কাদির ছিলেন সাংবাদিকতার গর্ব। তাঁর পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ দুঃখজনক। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।”
লন্ডনে অবস্থানরত নাজমা কাদের এখন বাংলাদেশের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ন্যায়বিচারপ্রিয় সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর প্রাপ্য সম্পদ ফেরত দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, “আমার এই আর্তনাদ যেন প্রশাসনের কানে পৌঁছে। আমি চাই, আমার প্রাপ্য সম্পদ আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক—যাতে আমার প্রয়াত স্বামীর আত্মা শান্তি পায়।”
একজন প্রবাসী নারী, প্রয়াত সাংবাদিকের স্ত্রী, এখন লড়ছেন নিজের অধিকার ও স্বামীর মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে। নাজমা কাদেরের এই ন্যায়ের লড়াই শুধু ব্যক্তিগত নয়—এটি সমাজের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো এক বাস্তবতা।