পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা—এক টুকরো শান্ত গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। এখানে মাটির ঘ্রাণ, নদীর স্রোত, পাখির ডাক আর মানুষের সরল মুখ একাকার হয়ে গেছে প্রকৃতির সঙ্গে। সাঁথিয়ার পথে প্রান্তে চললে মনে হয়, সময় যেন থেমে গেছে এক সোনালি অতীতে। প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি পথ, প্রতিটি মানুষের জীবনে লুকিয়ে আছে এক নান্দনিক রূপকথা।
সাঁথিয়ার প্রকৃতি বহুরূপী। বর্ষার সময় মাঠজুড়ে জলরাশি, ধানের শীষে হেলে পড়া বাতাস, আর কচুরিপানায় ভরা বিল যেন এক স্বপ্নিল দৃশ্যপট। শীতের সকালে খেজুর রসের মিষ্টি গন্ধে ম ম করে বাতাস, আর গ্রীষ্মে আম-জাম-লিচুর মৌ মৌ ঘ্রাণে জেগে ওঠে গ্রাম। এই প্রকৃতির সঙ্গে সাঁথিয়ার মানুষের সম্পর্কও নিবিড়—তাদের হাসি, দুঃখ, পরিশ্রম আর উৎসব সবই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে।
মানুষ এখানে এখনও সহজ-সরল। পরস্পরের খোঁজখবর নেওয়া, অতিথি আপ্যায়নে আন্তরিকতা, কিংবা বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো—সবকিছুতেই সাঁথিয়ার মানুষের মানবিকতা স্পষ্ট। তারা প্রকৃত অর্থেই “মানুষের মানুষ”।
সাঁথিয়ার পথে প্রান্তে শুধু সৌন্দর্য নয়, রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছোঁয়াও। এখানে আছে প্রাচীন মসজিদ, দিঘি, মন্দির, এবং স্মৃতি জাগানিয়া স্থাপনা, যা অতীতের গৌরবের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে।
আজ যখন শহরমুখী জীবন আমাদের গ্রামীণ শিকড়কে ভুলিয়ে দিতে চায়, তখন সাঁথিয়ার পথের প্রান্তে দাঁড়িয়ে মনে হয়—এমন সৌন্দর্য, এমন সরলতা, এমন মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে? এই মাটি, এই মানুষ, এই প্রকৃতিই আমাদের আসল বাংলাদেশ।
সাঁথিয়ার পথে প্রান্তে চললে বোঝা যায়, গ্রাম শুধু ভৌগোলিক এলাকা নয়—এ এক জীবন্ত অনুভূতি, এক নান্দনিক রূপকথা, যা আমাদের সংস্কৃতি ও মানবতার মূল ভিত্তি গড়ে দেয়।