Crime News tv 24
ঢাকামঙ্গলবার , ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে দোহারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, দোহার (ঢাকা):-
অক্টোবর ১৪, ২০২৫ ১১:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঢাকার দোহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেগম আয়শা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সাবেক প্রধান শিক্ষক কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে তাঁর স্থায়ী অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়াও, তার নিয়োগের সময় তার কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্বেও, তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ায় সে নিয়োগ বাতিল করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ গ্রহণ করায়, সেগুলো ফেরত নিতে সরকারের প্রতি আবেদন জানানো হয়।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় সচেতন অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সাবেক প্রধান শিক্ষক কুলসুম বেগমের নিয়োগের সময় সরকার বিধি মোতাবেক ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ১০বছর ৩ মাসের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়েও ম্যানেজিং কমিটি ম্যানেজ করে সরকারি বিধি উপক্ষা করে নিয়োগ লাভ করেন। এই ব্যাপারে শিক্ষা অধিদপ্তরের জরুরি দৃষ্টি দেয়ার আবেদন তারা জানান। এছাড়াও, তিনি রেজুলেশনে জুনিয়র বেতন গ্রেড থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগকে প্রমোশন দেখান অথচ সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেননি। তিনি এভাবেই দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষিকা হলেও বেতন পেতেন সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেডে।

তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে একক কর্তৃত্ব চালিয়ে আসছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্বজনপ্রীতি করে নিজের ও শ্বশুরালয়ের প্রায় ৮/৯ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন যারা সরাসরি তার আত্মীয়।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “আমাদের স্কুলের টেবিল, বেঞ্চ ও কিছু চেয়ার সাবেক প্রধান শিক্ষক তাঁর নিজস্ব লোকজন দিয়ে ঢাকায় বাসায় নিয়ে গেছেন। সেই কর্মচারীরাও এটি স্বীকার করেছেন। তাহলে এখনো তাঁর বিচার হচ্ছে না কেন?”

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জানান, “তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলতেন। দরিদ্র কেউ বেতন কমানোর অনুরোধ করলে তিনি তাদের গৃহকর্মীর কাজ করতে বলতেন। এমন একজন মানুষ কীভাবে শিক্ষক হতে পারেন?”

দশম শ্রেণির খাদিজা আক্তার অভিযোগ করেন, “আমরা জেনেছি যে, স্কুলের খেলার মাঠের জন্য ডিসি স্যার ১ লক্ষ টাকা দিলেও মাত্র বারো হাজার টাকার বালু ফেলা হয়। এর সাক্ষী আমাদের শিক্ষকেরাই। আমরা এর বিচার চাই।”

শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, অভিভাবকদেরও অভিযোগের তীর কুলসুম বেগমের দিকে। স্থানীয় অভিভাবক আবুল কাশেম বলেন, “তিনি একাই একশো। তাঁর কথার বাইরে কেউ কথা বলার সুযোগ পেত না। পকেট কমিটি বানিয়ে একাই স্কুল চালাতেন। আমরা বহুবার প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কিছু হয়নি।” স্থানীয় একাধিক অভিভাবক আরও জানান, শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে নির্মাণ কাজে লেনদেন—সবকিছুতেই কুলসুম বেগমের একক সিদ্ধান্ত চলত।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন, কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে আগেও দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলন হয়েছিল। ২০২৪ সালে অভিভাবক ও ছাত্রীরা মিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি বিস্তারিত অভিযোগপত্রও জমা দেন, যেখানে ৭৫টি অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। কিন্তু তদন্তে গড়িমসি এবং প্রতিকার না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এবার রাজপথে নেমেছে।
তারা বলেন, তিনি সাম্প্রদায়িক সুবিধা নেন অথচ সবচেয়ে বেশি জুলুম করেন নিজ সম্প্রদায়ের উপর।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সমাজকর্মী নুজহাত তারিন বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম চলতে পারে না। আমরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে গর্বিত। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া।”

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল দোহার থানায় গিয়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাসান আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ওসি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনেন এবং বলেন, “তদন্ত শেষের পথে। খুব দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। সত্য উদঘাটিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ বিষয়ে কুলসুম বেগমের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকেও কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।