তৌহিদ,মাগুরা জেলা প্রতিনিধি:-
মাগুরা শহরের পুলিশ লাইন্স মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের লাঠির আঘাতে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার তদন্তে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আটকে রাখা ও থানায় নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অভিভাবকরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ে শিক্ষকের উপস্থিতিতেই শিক্ষার্থীদের পেটায় তদন্তকারী পুলিশ সদস্যরা। এর আগে গত ১১ আগস্ট একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শিকদারের লাঠির আঘাতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন তানভীর গুরুতর আহত হয়। তার ডান পাশের কলার বোন (ঘাড়ের হাড়) ভেঙে যায়। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুর রাকিব মোল্লা ১২ আগস্ট মাগুরা সদর থানায় শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শিকদার ও শিক্ষিকা বেবি আক্তারকে আসামি করে মামলা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় ওই দুই শিক্ষক কোচিং ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। কোচিংয়ে না পড়লে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষায় ফেল করানো, অপমানজনক মন্তব্য করা এবং লাঠি দিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে আসছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তে স্কুলে যান এসআই তৌহিদুল ইসলাম। সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও কর্মচারী বিকন শিকদারের উপস্থিতিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রকৃত ঘটনা জানাতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের ঘুষি, চড়-থাপ্পড় ও ঘাড় ধরা শুরু করেন। পরে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে কয়েক ঘণ্টা শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে থানায় আটকের হুমকিও দেন।
এ বিষয়ে এসআই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকের লাঠির আঘাতে শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, এ বিষয়ে মামলা আছে। আমি সাক্ষী নিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেনি। তাই যা করা দরকার মনে করেছি তাই করেছি। এর বাইরে কিছু জানার থাকলে ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”
এদিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহে গেলে প্রধান শিক্ষকের উসকানিতে জনি নামের এক বহিরাগত সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। সাংবাদিকদের সংবাদ না করতে হুমকি দেওয়া হয় এবং লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আহত শিক্ষার্থী তানভীর অভিযোগ করে বলেন, “প্রাইভেট পড়ি না বলে প্রায়ই আমাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এখন ক্লাসে ঢুকলেই ভয় লাগে।”
তার বাবা আব্দুর রাকিব মোল্লা বলেন, “বিদ্যালয়টি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকায় অনেক বিষয় চাপা পড়ে যায়। আমার ছেলে তার বড় প্রমাণ। আমি চাই, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি হোক।”
অভিযুক্ত শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শিকদার দাবি করেন, “ইচ্ছাকৃতভাবে মারিনি, দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগ সত্য নয়।”
প্রধান শিক্ষক ইমরান হোসেন ফরহাদ বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক, তদন্তাধীন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে পূর্ব বিরোধ ছিল। কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তবে সাংবাদিক লাঞ্ছনার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।