সরকারের দেওয়া ওএমএস এর ৩৯ লাখ টাকার চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে
মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুরে সরকারের দেওয়া ওএমএসের (খোলা বাজারে খাদ্য শস্য বিক্রি) প্রায় ৭৮ মেট্রিকটন চাল পরিবেশক উঠিয়ে নিলেও তা পৌঁছায়নি কার্ডধারীদের হাতে। এক মাস পেরিয়ে গেলেও পরিবেশকের (ডিলার) বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
এই অনিয়মে পরিবেশকের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও উপজেলা প্রশাসন এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ নিশ্চুপ। খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫ হাজার ৫৬৭ জন উপকারভোগী কার্ডধারীর অনুকূলে পরিবেশক হোসেনিয়া কান্তা ঋতুর নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় মোহাম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে। কিন্তু সুবিধাভোগী কার্ডধারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই উপজেলার আটটি ইউনিয়নে হতদরিদ্র কার্ডধারীরা কেউই সেই চাল পাননি।
এদিকে ওএমএস ডিলার থেকে চাল না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছয় ইউনিয়নের টিসিবির পরিবেশক। দুই ইউনিয়নের ডিলার চাল পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও কার্ডধারীদের কেউ চাল পাননি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, জেলা খাদ্য বিভাগের চিঠিতে চলতি বছরের ১৫ মে ১৪১ নম্বর স্মারকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খাতের চার উপজেলার মোট বরাদ্দের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছিল মোহাম্মদপুর খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস।
অফিস নিবন্ধন বইতে (রেজিস্ট্রার) দেখা যায়, গত জুলাই মাসে ওএমএস পরিবেশক হোসেনিয়া কান্তা ঋতু স্বাক্ষরিত সরকারি গোডাউন থেকে ৫২ কেজির ১ হাজার ৫৩ বস্তা এবং ৩০ কেজির ৮৫৬ বস্তার ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন ২৬ টাকা দরে চাল উত্তোলন করে। এই চাল আটটি ইউনিয়নের আটজন টিসিবির পরিবেশকের মাধ্যমে তদারকি (ট্যাগ) অফিসারের উপস্থিতিতে
হতদরিদ্র উপকারভোগী কার্ডধারীদের কাছে ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি করে চাল বিক্রয় করার নিয়ম। এ নিয়ে আটটি ইউনিয়নের আটজন ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয়জন টিসিবির পরিবেশক জুলাই মাসের বরাদ্দকৃত চাল পাননি। এছাড়া বিনোদপুর এবং দীঘা ইউনিয়নের দুজন পরিবেশক চাল পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও কার্ড ধারীরা চাল না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
একাধিক উপকারভোগী বলছেন, টিসিবির ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি, ডাল পেলেও চাল পাননি।
রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল, শিউলী,দীঘা ইউনিয়নের স্বপ্নাসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকজন সুবিধাভোগী জানান, জুলাই মাসে তেল, চিনি, ডাল পেলেও তারা চাল পাননি। চাল নেই কেন জানতে চাইলে পরিবেশক উপকারভোগীকে বলেছেন চালের বরাদ্দ নেই।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার মজনুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা জুলাই মাসের বরাদ্দকৃত চাল ওএমএসের ডিলারকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আপনার অভিযোগের ভিত্তিতে আমি পরিবেশককে ডেকে টিসিবি ডিলারকে চাল দেওয়ার প্রমাণাদি হাজির করতে বলেছি। অসঙ্গতি পেলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক আইন মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে নোটিশ করেছি। রবিবার বিকেলে অফিসে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখা দিবেন।
মোহাম্মদপুর উপজেলা টিসিবি পণ্যের তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার প্রদীপ লস্কর বলেন, কার্ডধারীদের চাল প্রাপ্তি নিশ্চিত না হয়েই ডিলারের কাগজে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসের বরাদ্দকৃত চাল টিসিবির ডিলাররা কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছে কি না মনে পড়ছে না। তবে সই করে দিয়েছি মনে হয়।’ মোহাম্মদপুর উপজেলা ওএমএস পরিবেশক হোসেনিয়া কান্তা ঋতু ও স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে বা ফোনে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার বলেন, ‘আমার জানামতে সব চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।’
সার্বিক বিষয় (টিসিবি) ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ আকরাম হোসেন বলেন,নিয়ম হলো ওএমএস ডিলাররা খাদ্য দপ্তর থেকে চাল এনে টিসিবি ডিলারদের বুঝিয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে তাদের নির্ধারিত মুল্য বুঝে পেয়ে চলে যাবে। তবে গত মাসে টিসিবি গ্রাহকরা চাল পাইনি বিষয়টি আমি শুনেছি। সঙ্গে সঙ্গে জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
মাগুরা জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সন্দিপ বাবুর নাম্বারে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি রিছিপ করেননি। যে কারণে তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি। একটি সুত্রে জানাগেছে,বিষয়টা নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করেছে।