মৌলভীবাজার শহরের নামকরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইফলাইন হাসপাতাল-এর বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা, রোগীকে হয়রানি এবং অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী তুহিন জুবায়ের, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ) নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে এ অভিযোগ তুলেছেন।
ঘটনা অনুযায়ী, গত মাসের শেষ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনি গর্ভবতী স্ত্রীকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করান। অভিযোগ রয়েছে— হাসপাতালে ভর্তির পর প্রায় ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। শুধু একজন তরুণ ডিউটি ডাক্তার ও কয়েকজন নতুন পাশ করা নার্স রোগীকে সামলানোর চেষ্টা করেন। এমনকি রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টার আগে কোনো ধরণের মেডিকেল টেস্টও করানো যায়নি।
পরদিন সকালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টের ভিত্তিতে জানানো হয়, নরমাল ডেলিভারির দায়িত্ব হাসপাতাল নেবে না, সিজার করাতে হবে। তবে রোগীর আত্মীয়দের পছন্দের সার্জনদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত দুপুরে এক সার্জনের মাধ্যমে সিজার সম্পন্ন হয়। অভিযোগ রয়েছে, সার্জন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কোনো আলাপ না করেই অপারেশন করেন এবং মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যেই কেবিনে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় মা ও নবজাতককে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অপারেশনের পর নার্সদের দায়িত্ব শুধু সময়মতো ওষুধ দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল। নবজাতক মায়ের দুধ পাচ্ছে কি না কিংবা কান্নার কারণ সম্পর্কে চিকিৎসক বা নার্স কেউই দায়িত্বশীলভাবে নজর দেননি। এর ফলে তিনদিনের মাথায় নবজাতকের জন্ডিস ধরা পড়ে। পরে এক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসে জানান, জন্মের পর থেকেই বিকল্প উপায়ে দুধ খাওয়ানো উচিত ছিল।
ভুক্তভোগী জানান, হাসপাতালের পরিচালক রতন সাহেবকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি ম্যানেজারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ম্যানেজার উল্টো মন্তব্য করেন— “আপনারা অভিযোগ না দিলে বুঝবো কিভাবে যে সেবা পাচ্ছেন না!”
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে থাকার সময় বিল নিয়েও রোগীর পরিবারকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রথমে বিল বলা হয় প্রায় ৪৬ হাজার টাকা। কিন্তু নবজাতকের চিকিৎসার কারণে আরও একদিন থাকার পর বিল দাঁড়ায় প্রায় ৬২ হাজার টাকা। পরে পরিচালক রতনের হস্তক্ষেপে তর্ক-বিতর্কের পর বিল কমিয়ে আনা হয় ৪৪ হাজার টাকায়। অথচ শহরের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে একই ধরণের সিজার করাতে ২৫-৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না।
তুহিন জুবায়ের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“লাইফলাইন হাসপাতাল চকচকে ভবন, লিফট আর আলো দিয়ে নিজেদের নামকরা হাসপাতাল হিসেবে চালালেও প্রকৃত সেবায় ভয়াবহভাবে পিছিয়ে। রোগীর সেবা নয়, তাদের মূল লক্ষ্য ব্যবসা। মৌলভীবাজারের মতো একটি জেলায় স্বাস্থ্যসেবার নামে লুটপাট চলতে পারে—এটাই আমাদের জন্য লজ্জাজনক।”
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবা মান নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যসেবাকে ব্যবসা নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।