লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।
কিছুদিন আগে শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপজনিত সমস্যায়ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এনডিপির শোক
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)-র চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তজা ও মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। এক যৌথ শোকবার্তায় তাঁরা বলেন—
> “বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালো। বদরুদ্দীন উমর ছিলেন প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক, অকুতোভয় চিন্তক এবং সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব। তাঁর রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণীয় নয়।”
নেতৃবৃন্দ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতনামা মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে তিনি পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বুদ্ধিজীবী ও গবেষক হিসেবে তাঁর রচিত অসংখ্য গ্রন্থ সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
২০২৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন, যদিও পরবর্তীতে তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
দেশের প্রগতিশীল রাজনীতি ও চিন্তাধারার একজন অন্যতম পুরোধা বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে দেশ এক মহীরুহ হারালো।