গোপালগঞ্জে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম—তারিখসহ তথ্য সংশোধন কাজে জেলা নির্বাচন অফিসার দু’ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন এক ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবরে ই—মেইলে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী মুদি—ব্যবসায়ী মোঃ ইলিয়াচুর রহমান গোপালগঞ্জ পৌরসভাধীন আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা। সাড়ে ৪ বছর সৌদি—প্রবাসী থেকে তিনি ২০২১ সালের শেষদিকে দেশে ফেরেন।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মোঃ ইলিয়াচুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম—তারিখ, সঠিক নাম ও বানান ভুল সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য গত এপ্রিলের মাঝামাঝি আমি জেলা নির্বাচন অফিসে যাই এবং অনুমতি নিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে দেখা করি। আমার পাসপোর্টসহ যাবতীয় কাগজপত্র তাকে দেখাই। কিন্তু বিষয়টিকে অত্যন্ত জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ উল্লেখ করে একপর্যায়ে তিনি এ কাজে দু’ লাখ টাকা চান। আমি আমার আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অপারগতা জানিয়ে ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি কাগজপত্র ঠিক করে পরে দেখা করতে বলেন। পরবর্তীতে তার পরামর্শ অনুযায়ী জন্ম—সনদসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করে গত ৩ জুন পুনরায় তার সঙ্গে দেখা করি। কিন্তু তিনি নতুন কিছু কারণ দেখিয়ে আগের মতোই আমার কাছে একই ঘুষ দাবি করেন। পরদিন ৪ জুন আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনের আবেদন (ক্রমিক নম্বর: এনআইডিসিএ১৯৮৯০৩৪১) করি’।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘অনলাইনে আবেদন করার পর গত ১৮ জুন জেলা নির্বাচন অফিসার আমার শুনানী গ্রহন করেন। পরদিন ১৯ জুন আমি তার অফিসে গেলে পুনরায় একইধরণের কিছু ঝামেলা ও জটিলতার দোহাই দিয়ে আবারও ওই একই ঘুষ দাবি করেন এবং অনেক দরাদরির পর একপর্যায়ে তিনি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় রাজী হন। নিরাপত্তার খাতিরে সেদিনের সেসব কথোপকথন আমি মোবাইল ফোনে অডিও রেকর্ড করে রাখি। পরে ২৪ জুন বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করি গোপালগঞ্জ দুদক অফিসে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা আমাকে কোন সহযোগিতা দিতে না পারায় আমি বিস্মিত ও বিভ্রান্ত হই। যার প্রেক্ষিতে পরদিন ২৫ জুন আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ই—মেইল মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবরে নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে ন্যায়বিচারসহ ওই নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে একটি অভিযোগপত্র পাঠাই’।
দুদক গোপালগঞ্জের উপ—সহকারী পরিচালক মোঃ আল আমিন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলেও ওই মুহূর্তে আমরা তাকে কোন সহযোগিতা দিতে পারিনি, সুযোগ ছিল না।
তবে ঘুষ দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘এখন এআই প্রযুক্তির যুগ। এআই দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। একজনের কণ্ঠকে পরিবর্তন করে আরেকজনের কণ্ঠ বানানো যায়। তাছাড়া, মোঃ ইলিয়াচুর রহমানের প্রথম পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে তিনি ভোটার হয়েছেন। সার্ভারের ডাটাবেজে তিনি এসএসসি পাশ বলে উল্লেখ রয়েছে এবং সে অনুযায়ী তার জাতীয় পরিচয়পত্রের বিদ্যমান তথ্য ঠিক আছে। এছাড়াও তিনি যে আবেদন করেছেন সেখানে বয়স পার্থক্য রয়েছে ১০ বছর; যা ‘খ’ ক্যাটাগরী জেলা নির্বাচন অফিসারের এখতিয়াভুক্ত নয়। এসব কারণে ইতিমধ্যে তার সে আবেদনটি বাতিল করা হয়েছে’।
এদিকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব আকতার আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য দু’ সদস্য—বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। তাদেরকে ৭—কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।