প্রথম বউয়ের ৩ বছরের শিশু সন্তান আমির হামজাকে নিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন বাবা জালাল উদ্দিন (২৭)। ট্রেন কাছাকাছি চলে আসলে একমাত্র সন্তান আমির হামজাকে এক পাশে ফেলে দিয়ে নিজেই রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়েন। এতে করে শরীরে একটি পা ও হাতের আঙ্গুল কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়ায় ঘটনাস্থলে মারা যায় জালাল উদ্দিন। ছেলে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় প্রায় ৬টি সেলাই পড়ে। বর্তমানে আমির হামজা বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সদের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর পাশে নেই কোন আত্মীয় স্বজন। গুরুতর আহত ৩ বছরের শিশু আমির হামজার কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ। এ ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের ২ নং ওয়ার্ডের রেললাইনের ১ নং সিগন্যালের পাশে।
রবিবার (১১ মে) দুপুর আনুমানিক ১.৩০ মিনিটে বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৩৪৯ মিটারের ২০০ গজ দক্ষিণে রেলওয়ে ২৯৫ নং ব্রিজের ১নং সিগন্যালের পাশে রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় জালাল উদ্দিন ওরফে তামিম। সে সিলেট জেলার বিয়ানী বাজার উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার হিজলর টুক পশ্চিম বাগ প্রচন্ড খা গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে সে বিরামপুর পৌরশহরের ১নং ওয়ার্ডের চুরকুই (চরকাই) গ্রামের হাজার দাগ এলাকার ঘরজামাই। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিরামপুর উপজেলা শাখার নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের জয়েন্ট সেক্রেটারি শাজাহান বাদশাহ খোকন।
ঘটনাস্থলে শহীদ নামে এক ব্যক্তি জানান, রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা ট্রেন যাওয়ার পর একটি শিশুর কান্নার শব্দ পাওয়া যায়। কাছে গিয়ে দেখি ৩ বছরের শিশু আমির হামজা রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনের পাশে কান্না করতেছে আর রেললাইনের উপর পড়ে রয়েছে মৃত বাবার (জালাল উদ্দিন) দেহ। শহীদ দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাঁর মাথায় প্রায় ৬টি সেলাই দেওয়া হয়। বর্তমানে সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সদের হেফাজতে রয়েছেন পাশে নেই তাঁর কোন আত্মীয় স্বজন।
মৃত জালাল উদ্দিনের শশুর বাড়ীর স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মৃত জালাল উদ্দিন প্রায় ৫ বছর আগে পৌরশহরের ১নং ওয়ার্ডের চুরকুই (চরকাই) গ্রামের হাজার দাগ এলাকায় হানিফের মেয়ে হাফিজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ঘরজামাই হিসেবে সংসার করেন। তাঁদের সংসারে শিশু আমির হামজা জন্ম নেয়। পরবর্তীতে তাঁদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে ১ম স্ত্রী হাফিজা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। জালাল উদ্দিন শিশু আমির হামজাকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেও ঐ গ্রামেই ১ম শশুর বাড়ীর (১ম স্ত্রীর) পাশের বাড়ি রফিকুল ইসলামের মেয়ে বৃষ্টির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের একবছরের মাথায় দ্বিতীয় স্ত্রী (বৃষ্টি) গর্ভবতী হওয়ায় ১ম স্ত্রীর সন্তান আমির হামজাকে আর মেনে নিতে পারে না। প্রতিদিন জালাল উদ্দিন ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ৩ বছরের শিশু আমির হামজাকে নিয়ে কথা কাটাকাটি এমনকি বাচ্চাটির প্রতি অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়। এমনি ঘটনার বর্ণনা দেন নাম না প্রকাশে স্থানীয়রা।
অবশেষে শিশু আমির হামজাকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে জালাল উদ্দিন। নির্জন দুপুরে শিশু সন্তান আমির হামজাকে নিয়ে ছুটে চলেন রেললাইনের উপর না ফেরার উদ্দেশ্যে।না ফেরার দেশে জালাল উদ্দিন চলে গেলেও ৩ বছরের শিশু আমির হামজার দায়িত্ব নিবে কে? শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার প্রায় ৫ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও শিশুটির খোঁজে আসেনি কোন অভিভাবক এমনিটি জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এরকম এক লোমহর্ষক ঘটনায় সচেতন মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই ৩ বছরের শিশু আমির হামজার দায়িত্ব নিবে কে? সে কার কাছে নিরাপদ?
এ ঘটনায় পার্বতীপুর থানার হিলি রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তাজরুল ইসলাম জানান, লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে দ্বিতীয় স্ত্রীর পিতার (রফিকুল) নিকট দাফনের জন্য লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পার্বতীপুর রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে