১৪ অক্টোবর ২০২৫ (মঙ্গলবার): গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান ও ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজধানীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে আজ এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সংগঠন “মায়ের ডাক”। বক্তারা অভিযোগ করেন, দেশের সরকারের কাছে এখনো সত্য তথ্য পৌঁছাতে দেওয়া হচ্ছে না, গুম তদন্ত কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল কার্যত অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।
‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, “গুমের শিকার পরিবারগুলোর আওয়াজ আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছাচ্ছে, কিন্তু দেশের সরকারের কাছে যাচ্ছে না। সরকারে এখনো অপশক্তি রয়ে গেছে। সব তথ্য জানাতে এখনো বাধা দেওয়া হচ্ছে। গুম কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও তারা মাত্র দুটি অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের সেনানিবাসে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। তাই আজও আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচারের দাবি জানাতে হচ্ছে।”
বক্তারা আরও বলেন, এই আন্দোলন কেবল কয়েকটি পরিবারের নয়, এটি রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “গুম কমিশন এখনো পর্যন্ত ঘটনাগুলো অন্ধকারে রেখেছে। যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের নিয়েই তারা ব্যস্ত।”
গুমের শিকার কাজী ফরহাদের স্বজন আমানুল হক আমান বলেন, “স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। কমিশন শুধু যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের কথাই বলছে। কিন্তু যাঁরা ফিরে আসেননি, তাঁদের কথা কেউ বলে না।”
সৈয়দা শারমিন সুলতানা, গুমের শিকার খালেদ হোসেনের স্ত্রী, বলেন, “এক যুগ ধরে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছি, গুম কমিশন হয়েছে—কিন্তু তারা কোনো খবর দেয়নি। আমি চাই না আমার সন্তান একদিন এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাবার খোঁজ চাইবে। এই বিচার একটা প্রহসন।”
গুমের শিকার পারভেজ হোসেনের মেয়ে আদিবা ইসলাম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলে, “আমার ভাই বাবাকে দেখেনি, জানে না তিনি কেমন ছিলেন। আমরা বাবাকে ফেরত চাই। যদি ফিরিয়ে দিতে না পারেন, তবে অন্তত বিচার দিন।”
শাহরিয়ার কবির রাতুল, যার বাবা ও দাদাকে একসঙ্গে গুম করা হয়েছে, বলেন, “বাবার নাম লিখতে গেলে জানি না কী লিখব। তিনি মৃত না জীবিত—এই প্রশ্নের উত্তর কি রাষ্ট্র দেবে?”
ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টু গুম হওয়ার এক যুগ পরও কোনো তথ্য না পেয়ে তাঁর বোন রেহানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভাই কোথায়, আমরা জানতে চাই। গুম কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল কেন নীরব—তার উত্তরও আমরা চাই।”
মানববন্ধনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মালেক বলেন, “গত ১৫ বছর দেশে কোনো ন্যায়বিচার ছিল না। এই পরিবারগুলো এখনো কেন ন্যায়বিচার পাচ্ছে না?”
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন “মায়ের ডাক”-এর মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। এ সময় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক ও গুমের শিকার আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, গুম নাসির উদ্দিন মন্টুর বোন মিতু আক্তার, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুসহ অনেকে।
বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান—“স্বজনদের ফেরত দিন, না পারলে জড়িতদের বিচার করুন।”