শিমুল রেজা নিজস্ব প্রতিবেদক:-
দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। দেশে বিদেশগামীদের দক্ষ করতে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) থাকলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। বরং টিটিসির অধ্যক্ষ, বিদেশগামী কর্মীদের কাছে তিন দিনের প্রাক-ট্রেনিং করার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য, ও অর্থ আত্মসাৎ করার বিস্তর অনিয়ম দুর্নীতসহ নানা অভিযোগ রয়েছে চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লা টিটিসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুছাব্বেরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে অটোমেকানিক্স কোর্সে’ বছরের পর বছর নানা দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে অর্থ লোপাট করে নিজেদের আখের গোছানোর অভিযোগ ওঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুছাব্বেরুজ্জামান। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে গঠিত কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জানা গেছে, তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দোসর দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা। উপদেষ্টা-সচিবের চোখে ধুলো দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছেন দুর্নীতি। বিভিন্ন মহলে ইতোমধ্যেই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তার ক্ষমতার উৎস নিয়ে।
জানা যায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নানা কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে দীর্ঘদিন যাবত ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে ব্যাপক দুর্নীতি ও নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।, এই প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর ধরে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায়, চিকিৎসকের ভুয়া সিল বানিয়ে ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে জাল স্বাক্ষর করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নানা ধরণের দুর্নীতি এবং অনিয়ম হলেও প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় মুখ খুলে কথা বলার সাহস পায়নি অনেক ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থীরা। সম্প্রতি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং কোর্সের বিভিন্ন ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে শিক্ষার্থীরা বলেন এখানে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না, পরীক্ষায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে হলে ২৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হবে, মেডিকেল রিপোর্টের জন্য টাকা দিতে হবে
বিভিন্ন মালামাল সামগ্রী টেন্ডার ছাড়ায় বিক্রয় সহ- নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য তারা তুলে ধরেন।
দামুড়হুদার এক বাসিন্দা টিটিসিতে ব্যাচে ড্রাইভিং কোর্সে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সীমাহিন অনিয়ম আর দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে টিটিসি। সম্পূর্ন বিনামূল্যে ভর্তিসহ ৪ মাসের কোর্স শেষে সাকুল্যে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা আমাদের ষ্টাইপেন্ড দেয়া ছাড়াও সরকারী খরচেই বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেয়ার কথা অথচ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুছাব্বেরুজ্জামান স্যার। এখান থেকে এসব অনিয়মন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ না হলে প্রশিক্ষনার্থীদের দুর্ভোগ থেকেই যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশিক্ষনার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনকারী একজন দালাল জানায়, ‘প্রতিবার ভর্তির সময় সেই ব্যাচে মোট যত জনকে ভর্তি নিবে তাদের মধ্যে দুই একজন বাদে সবাইকে নির্ধারিত ৩০০০ হাজার টাকা দিয়েই তাদের নাম তালিকায় আসার জন্য কনফার্ম করতে হয়। তবেই কেবল লটারিতে তাদের পাশ করা দিবে, সে যেকোন মূল্যেই হোক। এখন সিদ্ধান্ত আপনেকেই নিতি হবে, ওই প্রক্রিয়ায় পাশ করা নিবেন নাকি আপনারা নিজেরা নিজেরাই চেষ্টা করবেন সেটা আপনেরে বিষয়’।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুছাব্বেরুজ্জামকন সাথে কথা বলে তিনি বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে এটা সম্পূর্ণ শতভাগ মিথ্যা, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লার্নার বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হয়। মেডিকেল রিপোর্ট বিষয় জানতে চাইলে বলেন ওটা সিভিল সার্জন অফিস থেকে নেওয়া হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, পুরাতন মালামাল বিক্রি করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। টেন্ডার ছাড়া মামামাল বিক্রির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সরকারি নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে যেখানে বিক্রি করার কথা রয়েছে। সেখানে কিভাবে আপনি টেন্ডার বাদে মালামাল বিক্রি করলেন , জানতে চাইলে বলেন, কোনো মালামাল বিক্রি করা হয়নি সব মালামাল স্টোরে রয়েছে।