মোঃ সাবেদুল সরকার, পাবনা জেলা প্রতিনিধি:-
পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারীনগর ইউনিয়নের তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি সদস্য বিজলী সমাজে মানবতার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এলাকায় মানবিক, সাহসী ও নির্ভরযোগ্য জন প্রতিনিধির স্বীকৃতি পেয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়েও মানুষের কাছে তিনি এখন অনেক পরিচিতমূখ।
প্রতিদিন ভোরে মানুষের খবর নেওয়াই তার অভ্যাস। কার ঘরে খাবার নেই কে ওষুধের অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না। কিংবা কোন পরিবার জরুরি সহায়তার অপেক্ষায় এসবের খোঁজ সব সময়ই থাকে তার কাছে। নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই বছরের পর বছর বিভিন্ন অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা করছেন তিনি।
বিজলী আক্তার বলেন, মানুষের সেবা করা আমার দায়িত্ব নয়, এটা আমার ভালোবাসা। তৃতীয় লিঙ্গ হওয়ায় সমাজ অনেক সময় আমাদের আলাদা করে দেখে। কিন্তু আমি চাই মানুষ বুঝুক, আমরাও সমাজেরই অংশ, আমরাও মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, যখন দেখি কারো মুখে হাসি ফুটেছে, তখনই মনে হয় আমি ঠিক পথেই আছি।
স্থানীয় তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, বিজলী ছাড়া আগে কেউ আমাদের নিয়ে ভাবত না। সে আমাদের জন্য কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। সম্মান দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে।
এলাকা বাসীরাও মনে করেন, বিজলী এলাকার সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি।
বনওয়ারীনগর বাজারের অনেক মুদি দোকানীরা জানান, বিজলী রাত বিরাতে মানুষের ডাকে ছুটে আসে। স্বার্থ ছাড় মানুষের জন্য কাজ করতে দেখেছি তাকে।
এলাকার অনেক ব্যক্তি বলেন, আগে এদের নিয়ে নানা ধারণা ছিল। এখন বিজলী দেখিয়ে দিয়েছে মানুষ তার পরিচয়ে নয়, কাজে বড় হয়।
অনেকে বিজলীর প্রশংসায় বলেন, সমস্যা হলে বিজলীকে প্রথমেই পাশে পাওয়া যায়। মানুষের জন্য তার যে আন্তরিকতা তা সত্যিই অনুকরণ যোগ্য।
বিজলী তার কাজের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করেছে। সে দায়িত্ববান, সৎ ও মানবিক। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হয়েও যে এতো কার্যকর ভাবে কাজ করে যায় বিজলী তার বাস্তব উদাহরণ।
মানবিকতা, সাহস ও দায়বদ্ধতার অনন্য মিশেলে বিজলী আজ ফরিদপুরের মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। নিজের পরিচয় ছাপিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। আমাদের সমাজে এমন ব্যক্তি এখনো আছে যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়েও মানুষের সেবা করে।

