বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, সমাজসেবক ও বাংলার গর্ব আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী শনিবার (২ আগস্ট)। ১৮৬১ সালের এই দিনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ।
বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয়ভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হচ্ছে। খুলনা জেলা প্রশাসন, পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসন এবং রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—সকাল ১০টায় রাড়ুলীতে প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জন্মস্থান পরিদর্শন, বিজ্ঞানীর জীবন ও কর্মভিত্তিক আলোকচিত্র ও ভিডিও প্রদর্শনীর উদ্বোধন, আলোচনা সভা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আকতার হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জীবন ও কর্ম ছিল বিজ্ঞানমনস্কতা, সমাজসেবা ও আত্মত্যাগে উজ্জ্বল। তিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে প্রথম আধুনিক রাসায়নিক শিল্পের সূচনা করেন। মাত্র ৮০০ টাকা মূলধনে ১৮৯২ সালে শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠান আজও বিজ্ঞান ও শিল্পের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন।
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি শুধু বিজ্ঞানেই নয়, শিক্ষা, আর্থিক স্বনির্ভরতা ও শিল্পায়নেও রাখেন অবিস্মরণীয় অবদান। খুলনার সোনাডাঙ্গায় ‘পি.সি. কটন মিল’, রাড়ুলীতে ‘সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক’, বাগেরহাটে ‘পি.সি. কলেজ’, খুলনায় ‘এ.পি.সি শিশু বিদ্যালয়’সহ নানা শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান তারই কীর্তি।
তিনি ১৮৯৫ সালে রাসায়নিক যৌগ মার্কিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯১২ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, এবং পরে মহীশুর, বেনারস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯১২ সালে ‘সি.আই.ই’ এবং ১৯২৯ সালে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে।
এই মহান বিজ্ঞানী ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন। তার বিজ্ঞানচর্চা, মানবিকতা ও দেশপ্রেম আজও জাতিকে প্রেরণা জোগায়।