একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কারো বয়স ৫০ কারো বা ৩৫ বছর। ক্লাস শেষে নেই পরীক্ষা ভীতি কিন্তু আছে শেখার আনন্দ। এই শিক্ষার মাধ্যমে বাড়ছে কৃষিতে উৎপাদন। দক্ষ হলে কৃষক। এমনই স্কুলের দেখা মিলেছে নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকায় । এর ফলে উৎপাদন বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের প্রোগাম অন এগ্রিকালচারাল এন্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ এন্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) এর আওতায় নড়াইল জেলার নড়াইল সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষক কৃষাণীদের হাতে কলমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। ২৫ জন পুরুষ ও মহিলা কৃষাণীদের মিলে একটি গ্রুপ। দশ দিনব্যাপী এই স্কুল প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষ হচ্ছে কৃষক কৃষাণীরা। রবি প্রকল্প নামে ৬ মাস মেয়াদি এই প্রশিক্ষনে ১০টি ক্লাসে জন্য ২ হাজার টাকা করে ভাতা এবং নাস্তা দেয়া হয় প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে। প্রশিক্ষনের সাথে ভাতা পেয়ে খুশি প্রশিক্ষনার্থীরা।
গত ২৯ জুলাই মঙ্গলবার সরেজমিন কালিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ রকম বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়। কালিয়া উপজেলার উড়সী গ্রামের স্থাপিত পার্টনার ফিল্ড স্কুল (PFS)-ধান ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থী আজিজুল গাজী বলেন, “বাপদাদার আমল থেকে কৃষি কাজ করে আসছি। কিন্তু এই কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা নতুন অনেক কিছু শিখতে পারলাম। এখানে যা শিখেছি তা জমিতে ব্যবহার করতে অনেক উপকার হবে। তিনি আরো বলেন, কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইভা মল্লিক আপা নিয়মিত আমাদের এখানে এসে ক্লাসের খোজ খবর নিয়েছে। আমাদেরকে উদ্ধুত করেছেন।
একই স্কুলের প্রশিক্ষনার্থী শেফালী বেগম বলেন, আমরা এখান থেকে কৃষিকাজের সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ১০টি ক্লাস করেছি। এর জন্য আমাদেরকে ২ হাজার টাকা দিয়েছে সরকার। আর সাথে নাস্তাও দিয়েছে। আমরা সবাই ঠিকঠাকমত টাকা ও নাস্তার পেয়েছি। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কালিয়া উপজেলার বাঁকা গ্রামের স্থাপিত পার্টনার ফিল্ড স্কুল (PFS)-ধান ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থী আছিয়া খানম বলেন, এই স্কুলের মাধ্যমে আমরা কীটনাশক, বালাই নাশক এর ব্যবহার শিখেছি। বীজ সংরক্ষণ করা শিখতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, এই প্রশিক্ষণের সময় আমরা ২ হাজার করে টাকা পেয়েছি। একটা সনদপত্র ও নাস্তা পেয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে।
কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক বলেন, কালিয়া উপজেলা গত জুনের ১৪টি স্কুলে কার্যক্রম ছিল। প্রতিটি স্কুলের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সঠিক ভাবে ভাতার টাকা ও নাস্তা প্রশিক্ষনার্থীদের কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের কৃষকদের নিয়ে সমবায় সমিতির গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পরবর্তী কাজ চলবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কৃষক নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে পারবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য কৃষককে স্বাবলম্বী করা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারবো।
খামার বাড়ি নড়াইলের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন নড়াইল জেলার পাটনার ফিল্ড স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে কলমে বীজ উৎপাদন, চাষবাসের আধুনিক কলাকৌশল শেখানো হয়। এ বিষয়টি কৃষকদের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, এর অংশ হিসেবে কৃষক কৃষাণীরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে সঞ্চয় করে কৃষিকাজের জন্য বিভিন্ন কাজ করে উদ্যোক্তা হতে পারছে। নড়াইল জেলার সকল উপজেলায় সুন্দর ভাবে এই কাজ চলছে। প্রশিক্ষার্থীরা যেন তাদের ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা সঠিকভাবে বুঝে পায় সে বিষয়ে নড়াইল জেলা কৃষি অফিস সজাগ আছে।