মেহেদী হাসান (রাজ) রাজশাহী ব্যুরো:-
রাজশাহীর উপকণ্ঠে শ্যামপুর বালুঘাটে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অবাধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী শিহাব নামের এক ব্যক্তি কোনো বৈধ লিজ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, পূর্বে প্রতি ড্রামট্রাক বালু যেখানে ৫ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, বর্তমানে তা ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ দামে বালু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া, বেপরোয়া ট্রাক চলাচলের কারণে আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল ধরেছে। কিন্তু শিহাবের প্রভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না, ফলে এলাকাজুড়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এক মাস আগে জেলা প্রশাসন মধ্যরাতে লোকদেখানো একটি অভিযান চালালেও তা ছিল নিছক কাগুজে উদ্যোগ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতেই এই অবৈধ বালু ব্যবসা দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে সিহাবের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় গোদাগাড়ীর ফুলতলা ঘাটে ইজারাদার মান্নাফ বালু উত্তোলন না করে নদী পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক ইজারাদার নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করছেন, যার কারণে শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশ চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার ফলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও পাবনার বিভিন্ন এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় নদী ভাঙনও শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমতলা, নগরীর পঞ্চবটী থেকে তালাইমারি, চারঘাটের টাঙ্গন ও বাঘা উপজেলার কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, উচ্চমূল্যে বালু ও মাটি বিক্রির বিষয়টি অনেক ইজারাদার স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, বর্ষায় ড্রেজিং করে বালু তুলতে হচ্ছে এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় দামও কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার জানান , রাজশাহীসহ ৮টি জেলায় বৈধ বালুঘাট রয়েছে ৮০টি, আর অবৈধ ঘাটের সংখ্যা ১৫০-এর বেশি। এসব অবৈধ ঘাটে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা , প্রশাসনিক অভিযান ও নজরদারির ঘাটতির সুযোগেই বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠেছে বালু দস্যুদের এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট ।