Crime News tv 24
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ জুন ২০২৫
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অনিয়মেই চলছে জীবননগর উপজেলায় টিসিবির ডিলার কার্যক্রম, উপজেলা প্রশাসনের নজর নেই আওয়ামী লীগের প্রভাবে ডিলার হয়েছেন স্বামি-স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা ও একই পরিবারের আপন দুইভাই ডিলার তিনজনের কার্যক্রম একা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা সাগর কুমার দুই ডিলারের স্বাক্ষরও করেন সাগর কুমার।

নিজস্ব প্রতিবেদক:-
জুন ২৬, ২০২৫ ৩:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় নীতিমালা ভঙ্গ করেই চলছে টিসিবি’র কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের আমলে দেয়া ডিলার নিয়োগে ছিলো ব্যাপক অনিয়ম। আবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও সেই আওয়ামী ক্যাডাররাই চালাচ্ছেন টিসিবি কার্যক্রম। প্রশ্ন উঠেছে, নীতিমালা অনুসরণ করে প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একটি মহল বলছে, অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়ার কারণেই অনিয়ম খতিয়ে দেখে না সংশ্লিষ্ট্য কর্মকর্তা।
জীবনননগর উপজেলায় নীতিমালা ভঙ্গ করে স্বামী-স্ত্রী ও আপন দুই ভাই হয়েছেন টিসিবির ডিলার, রয়েছে এমন নজিরও। বেশিরভাগেরই নেই কোনো নিত্যপণ্যের দোকান বা গুদাম। ডিলারদের কেউ ভূষিমাল ব্যবসায়ী, কেউ ঠিকাদার ব্যবসায়ী। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ী এবং যাদের দোকানে ৩ টন পণ্য ধারণ উপযোগী গুদাম রয়েছে তাদেরকেই ডিলারশিপ দেয়ার দাবি উঠেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোঃ সাইদুর রহমান জীবননগর পৌরসভার সাবেক কমিশনার। নারায়নপুর মোড়ে মেসার্স সাইদুর রহমান নামে তিনি একটি দোকান নিয়েছেন। সেই দোকানের নামে টিসিবি’র ডিলারশিপ। মুদি দোকানি না হয়েও তিনি এ ডিলারশিপ পেয়েছেন। তার আপন ভাইকেও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ডিলার বানিয়েছেন। সাইদুর রহমানের আপন ভাই শরিফুল ইসলাম। শরিফুল ইসলামের নামে মেসার্স আয়েশা মুদি স্টোরের ডিলারশিপ। তারা দুজনেই মুদি ব্যবসায়ী নন, তবে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি আলী আজগর টগরের ঘনিষ্ট সহচর। টগরের প্রভাব খাটিয়ে ইতোপূর্বে নানা অনিয়ম করার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের পিতা শওকত আলী জীবননগর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি।

আরও আজব ঘটনাও দেখা গেছে জীবননগর টিসিবির ডিলারদের মধ্যে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে স্বামি-স্ত্রী দুজনের নামে দুইটি পৃথক ডিলারশীপ দেয়া হয়েছে। নারায়নপুর মোড়ের একটি ঠিকানায় মেসার্স সততা মুদি স্টোর ও মেসার্স খাদিজা মুদি স্টোর নামে পৃথক দুইটি ডিলারশিপ রয়েছে মোঃ রহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খাদিজা খাতুনের নামে। রহিদুল ইসলাম চিহ্নিত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নেতা।

ইতোপূর্বে এসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন ও আলোচনা উঠলেও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নেননি কোনো ব্যবস্থা। বিষয়টি জানার পরও প্রশাসনের অজানা কারণে ডিলারগুলো এখনো বহাল তবিয়তে রেখে দেয়ার কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন, এসব আওয়ামী লীগের নেতারা পলাতক। কোনো একজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার মদদে তার সাথে লাভ্যাংশ ভাগের শর্তে এখনো রেখে দেয়া হয়েছে এই ডিলারগুলো। অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণেই নীতিমালা বর্হিভূত এই কাজও জীবননগরে চলছে সাড়ম্বরে।

এখানেই শেষ নয়, অনিয়ম আর নীতিমালা বর্হিভূত অবস্থায় থেকেও জীবননগর টিসিবির অনেক কিছুকেই বৈধতা দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। আওয়ামী লীগের আমলে অনিয়ম করেই দেয়া হয়েছে এসব ডিলারশীপ। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। নীতিমালা অনুযায়ী গোডাউন না থাকা সত্ত্বেও অন্যের দোকানে ব্যানার মেরে ডিলারশীপ নিয়েছেন মেসার্স শফি মুদি স্টোরের মালিক ও সীমান্ত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ শফিকুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্ম করার অভিযোগ ছিলো।
আরেকজন আয়ান মুদি স্টোরের মালিক জাহিদুল ইসলামের নেই কোন মুদি ব্যবসা। তিনি পেশায় একজন ভূষিমাল ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে টিসিবির মালামাল বিক্রির একাধীকবার অনিয়ম ও মালামাল ক্রয় করতে আসা ব্যাক্তিদের সাথে অসদাচারণের অভিযোগসহ ভিডিও এবং সংবাদ একাধীক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি বার বার অনিয়ম-দুর্নীতি ঢেকেছেন। তবে আঁচ পড়েনি তার ডিলারশীপে।

আরেকজন ডিলার জীবননগর পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম শরিফুল ইসলাম ছোট বাবু। বর্তমানে তিনি পলাতক। আওয়ামী লীগের আমলে প্রভাব খাটিয়ে নিয়েছিলেন ডিলারশীপ। তার একটি গোডাউন আছে। সেই একটি গোডাউনেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগের আরও দুইজন নেতাকে ডিলারশীপ পাইয়ে দেন তিনি। তাদের মধ্যে একজন মেসার্স শরিফুল স্টোরের মালিক যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম। ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনিও রয়েছেন পলাতক। তবে এই তিনটি ডিলারশীপের তিন মালিকের মধ্যে একজন নতুন রুপ ধরেছেন। মেসার্স সাগর কুমার বিশ্বাস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাগর কুমার। তার বিরুদ্ধে জীবননগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নারায়ণপুর ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের হয়ে দখল ও ভোট চুরির অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির নেতারা। মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে হয়রানি করার জন্যও তিনি এলাকায় বেশ পরিচিত। জীবননগর পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম শরিফুল ইসলাম ছোট বাবুর গ্রুপে থাকা এই সাগর কুমার এখনো আছেন বেশ দাপটে। অভিযোগ রয়েছে, একমাত্র সনাতন ধর্মের দোহাই দিয়ে সংখ্যা নির্যাতনের মামলার হুমকি-ধামকি দিয়ে সাগর কুমার বহাল তবিয়তে আছেন। জীবননগর পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম শরিফুল ইসলাম ছোট বাবুর ও যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম পলাতক থাকা সত্বেও সাগর কুমার তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এমনকি এখনো পলাতক থাকায় সরকারি খাতায় ছোট বাবু ও শরিফুল ইসলামের স্বাক্ষরও করেন সাগর কুমার। তাদের এছাড়া, আওয়ামী লীগের অনেক নেতারই অর্থনৈতিক লেনদেন তথা ব্যবসা এখন সাগরের ঘাড়ে। বিএনপির একটি পক্ষের অভিযোগ, সাগর কুমারের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন বিএনপিরই কয়েকজন নেতা। প্রকাশ্যে তাদের সাথেই এখন চলাফেরা করেন সাগর কুমার।

তবে এতোকিছুর পরও উপজেলা প্রশাসনের এসবের দিকে নজর নেই। তবে ভিন্নতা দেখা গেছে একটিমাত্র টিসিবি ডিলারশীপে। মেসার্স লুবনা ট্রেডাসের মালিক মোঃ মিঠুনের টিসিবি মালামাল দেয়া বন্ধ করা হয়েছে প্রশাসন থেকে। মিঠুনের অভিযোগ, সাংবাদিকতার সূত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিনের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশের পর অন্যায়ভাবে তার টিসিবি মালামাল দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। মিঠুনের দাবি, যে দিন কেডিকে ইউনিয়নের একটি ছোট এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার মালিকাধীন মেসার্স লুবনা ট্রের্ডাসকে শোকজ করা হয়, সেদিন ওই ইউনিয়নে তার প্রতিষ্ঠানের টিসিবি পন্য বিতরণ ছিলোই না।

এছাড়া, মেসার্স সরকার মুদি স্টোরের মালিক মোতালেব হোসেন। তিনি মুদি ব্যবসায়ী নন। পেশায় একজন চাতাল ব্যবসায়ী। উথলী মোড়ের মেসার্স আলিফ ট্রেডাসের মালিক মোঃ সলিমুল্লাহ। তারও নেই কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উথলী মোড়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শুধুমাত্র টিসিবির মালামাল বিক্রি করেন। মেসার্স মিম এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ মিল্টন হোসেন। তার নেই কোন মুদি দোকান। তিনি পেশায় একজন গরুর ব্যাপারী।

টিসিবি ঝিনাইদহ ক্যাম্প প্রধান মোঃ আকরাম হোসেন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অনেকেই প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ী নন। এবং একই পরিবারের মধ্যে যদি একাধীক ডিলার থাকে তা হলে, জেলা প্রশাসন ওইসব ডিলারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সাইদুর রহমান আমার আপন ভাই। এক পরিবারে দুইজন হবে কিনা, ঢাকা অফিস জানে। আমি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নয়। আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলেন।’

সাইদুর রহমান বলেন, ‘ভাই ভাই পরিবারের মধ্যে আসেনা। টাকা পয়সা দিয়ে ডিলার টিকিয়ে রাখিনি। প্রতিপক্ষ যদি বাতিল করে দেয়, বাতিল হয়ে যাবে। আপন ভাই পরিবারের মধ্যে আসেনা।’

মোঃ রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডিলারশীপ নেয়ার জন্য কোনো ঘুষ দিইনি। সেই সময় কোনো ডিলার ছিলো। আমরা দিয়েছি, হয়েছে। আমার অর টিসিবি করবো না। ৭শ মাল দেয়, তিনশ বিক্রি হয়না। ডিলার যদি বাদ হয়ে যায়, তাহলে যাক। আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’ তাঁর স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীই মালামাল উঠায় এবং বিক্রি করে। এক পরিবারের দুইজন থাকবে কিনা, আমার স্বামী জানে। তার সাথে কথা বলেন।’

জীবননগর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আমাদের কেন্দ্রে সময় বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রভাব খাটিয়ে ভোটচুরি করেছিলো আওয়ামী লীগের দোসররা। নেতৃত্বে ছোট বাবু, সাগর কুমারসহ আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলো।’

সাগর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জীবননগর পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম শরিফুল ইসলাম ছোট বাবু ও যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলামের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। তাদের ব্যবসা আমি পরিচালনা করিনা। ভোটচুরির বিষয়টি সত্য নয়। এরকম কোনো অভিযোগ কোনো দিনই আমার নামে নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে জীবননগর উপজেলার একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, ‘টিসিবির ডিলারগুলো অনিয়মের মধ্যেই চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিনের সুবিধাবাদীদের প্রতি নজর নেই। শুনলাম, একজন নির্দোষ ব্যাক্তির ডিলার বাতিল করার জন্য তিনি উঠে-পড়ে লেগেছেন। তার কি বাকি অনিয়ম-অন্যায়গুলো নজরে পড়ে না? নাকি তিনি সেখান থেকে সুবিধা নেন।?’

আরেকজন বিএনপি নেতা বলেন, ‘সাগর কুমার আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছে। সে সরাসরি ভোট চোর। আওয়ামী লীগের হয়ে তার যত সুবিধা নেয়া আমরা দেখেছি। আবার দেখছি, বিএনপির কয়েকজন সুবিধাভোগীর সাথে তার মিশতে। ঠাকার কাছে যেসব নেতারা বিক্রি হয়েছে। তাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।’

এ বিষয়ে জানতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তার ফোন ওয়েটিং দেখালেও তিনি এই প্রতিবেদকরে ফোন রিসিভ করেননি।

টিসিবি ঝিনাইদহ ক্যাম্পের উপ-পরিচালক মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, ‘একই পরিবারের দুইজন বা স্বামী-স্ত্রী, তাহলে নীতিমালা অনুযায়ী হতে পারে না। অনিয়ম হলে তা যাচাই করা হবে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে নীতিমালা দেখতে হবে। আগামি কালকে বলতে পারবো। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’