চুয়াডাঙ্গার গন্ডি পেরিয়ে বনানী থেকে মিরপুর ঢাকার বুকে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এক ভয়ংকর প্রতারণার বেপরোয়া নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা হিরু সহ তার নেতৃত্বে গড়ে তোলা মানবপাচার চক্র। দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে বিদেশে নিয়ে উচ্চ বেতনে ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবলীলায় তারা।
আমেরিকা, ইসরাইল, রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগ দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ইতিমধ্যেই হাতিয়ে নিয়েছে এই সংঘবদ্ধ’ মানব পাচার চক্র। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শুধু প্রতারণাই নয় এই চক্রের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের গোপন যোগসাজসেরও প্রমাণ মিলেছে। এই চক্রের মূল হোতা মোঃ আবু বক্কর (হিরু), বয়স ৩৪। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর । ঘৃন্য এই কর্মকান্ডে নিরলসভাবে সহযোগিতা করেন হিরুর স্ত্রী জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক নাসরিন সুলতানা রিমা। জীবননগর শহরে তাদের নিজস্ব বাড়ি থাকলেও বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানবপাচার ও প্রতারনার ব্যবসায়িক স্বার্থে তারা চুয়াডাঙ্গার পলাশ পাড়ায় ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেন। সেখান থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় হিরু দিনদিন তার মানবপাচার ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার অব্যাহত চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি সে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার পারকৃষ্ণপুর গ্ৰামের মৃত আঃ সালামের ছেলে মোহাম্মদ জাহানের কাছ থেকে তার এক আত্মীয়কে ইউরোপের কোন এক দেশে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । একপর্যায়ে জাল ভিসা দিয়ে পার পাওয়র চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। ভিসা জালিয়াতি প্রমানিত হলে ভূক্তভোগী জাহান প্রতারক হিরুর কাছে টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চেয়েও না পেয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে থাকে। ভূক্তভোগী জাহান এই প্রতিবেদনকে জানান,এভাবে কোন সূরাহা না পেয়ে অভিযুক্ত হিরু ও তার সঙ্গে যুক্ত পিয়াস (৩৫), ফজলুর কাদের (৫৮), এবং ভুয়া ভিসা তৈরির কারিগর তানভীরের বিরুদ্ধে ঢাকার মিরপুর ও বনানী থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। তারা বিদেশে ভিসা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় এবং পরে তাদের হাতে তুলে দেয় ভুয়া ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট। ভুক্তভোগী মোঃ জাহান জানান, রাশেদুল, আসাদুজ্জামান ইমান, রি
য়াজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, মোঃ আমির হামজা, রুপক আকন, অমি হাসান, রায়হান, মশিউর রহমান মুন্না, মুন্না ব্যাপারি সহ অনেক সাধারণ মানুষকে ‘উন্নত জীবনের’ স্বপ্ন দেখিয়ে বিপজ্জনক রুটে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এদের মধ্যে কেউ তার কাঙ্খিত দেশে পৌছাতে পারেননি, অনেকের পাসপোর্ট আটকে রেখে ব্ল্যাকমেইল করছে হিরু ও পিয়াস। এক ভিডিওতে হিমুর সহযোগী পিয়াস নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাদের অফিসে ৪০টির বেশি পাসপোর্ট রাখা আছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে মোঃ জাহান বনানী থানায় অভিযুক্ত হিরুর কাছ থেকে টাকা ও পাসপোর্ট গুলো উদ্ধারের আশায় অভিযোগ দায়ের করেন। মোহাম্মদ জাহান আরো জানান, তিনি ব্যাংক রশিদে আবু বকর হিরুর একাউন্টে টাকা দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে হিরু তাকে জাল ভিসা দিয়েছেন এর সকল প্রমাণ পত্র তার কাছ রয়েছে। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারক হিরু ঢাকার খিলগাঁও বাসাবো এলাকার মন্দির রোডে একটি ফ্লাট কিনে দিয়েছে ওর স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা নাসরিন সুলতানার নামে।
এই চক্র শুধু প্রতারণায় সীমাবদ্ধ নয় এরা সরাসরি মানব পাচারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, রাশিয়ার মতো বিপজ্জনক এলাকায় মানুষ পাঠিয়ে তারা ভুক্তভোগীদের জীবন চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
ভূক্তভোগী জাহান হতাশা ব্যক্ত করে বলেন মানবপাচার ও প্রতারণার এই বিষয়টি নিয়ে থানায় সূস্পষ্ঠ অভিযোগ দায়ের এবং বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ কিংবা কোন তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
চরম ক্ষতিগ্রস্ত জাহান টাকা ও পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার আশায় প্রশাসন ও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সেই সাথে তিনি প্রতারক এই মানবপাচার চক্রের মূল হোতা আবু বকর হিরুকে অবিলম্বে আটক করে সে সহ তার চক্রের সকল সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত আবু বকর হিরু তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকার করে এই প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, তিনি জাহানের কাছ থেকে ১২ লাখ নয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন, তবে তিনিও জাহানের কাছে কিছু টাকা পাবেন।
আজাদ হোসেন/চুয়াডাঙ্গা
০১৭১১-২১৭৩৯০