Crime News tv 24
ঢাকাশুক্রবার , ৩০ মে ২০২৫
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুই সন্তানকে ছেড়ে নিখোঁজ মা: দুই মাসেও হদিস নেই মা রিনা পারভীনের।

Link Copied!

রিনার মেয়েটা এখনো জানে না,তার মা আর ফিরবে কি না। রিনার ছেলেটা প্রতিদিন সন্ধ্যায় মায়ের ফোনে ডায়াল দেয়, ফোন এখনো বন্ধ। দু’মাস পেরিয়ে গেছে—তবু ফিরে আসেনি তাদের মা।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার এক নিঃসঙ্গ দুপুরে নিখোঁজ হন দুই সন্তানের জননী রিনা পারভীন (৩৭)। শহরের থানা রোডের ‘থ্রীস্টার হোটেল’-এর মালিক সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী রিনা ১১ এপ্রিল সকালে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

পরদিন কালীগঞ্জ থানায় গিয়ে স্বামী সাজ্জাদ হোসেন একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু আজ দু’মাস পেরিয়ে গেলেও তার প্রিয়তমার কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ।

রিনার চলে যাওয়া শুধু নিখোঁজ হওয়া নয়—এ যেন এক নিঃশব্দ মৃত্যু, প্রতিদিন একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে একটি পরিবার। ছেলে ছোয়াদ ইসলাম (২২) চুপচাপ তাকিয়ে থাকে মায়ের ছবির দিকে। মেয়ে জারিন (১৪) রাতে ঘুমাতে গেলে মায়ের গায়ের গন্ধ খোঁজে বালিশে।

অজানা যাত্রা,নিখোঁজের রহস্য রিনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিখোঁজের দিন থেকেই বন্ধ। তবে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে জানতে পেরেছে—১৩ এপ্রিল সেটি পাবনায় ও ২৩ এপ্রিল পিরোজপুরে কিছু সময়ের জন্য চালু ছিল। তার মানে রিনা কোথাও গিয়েছিলেন, বা নেওয়া হয়েছিল?

আরো চমকে ওঠার মতো তথ্য আসে যখন সাজ্জাদ হোসেন জানান,নিখোঁজের ১০ দিন আগে,১ এপ্রিল তার স্ত্রীর নামে একটি তালাকনামা কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন খানের স্বাক্ষরসহ ১২ মে ডাকযোগে তার হাতে আসে। অথচ ১১ এপ্রিল থেকেই রিনা নিখোঁজ!

সাজ্জাদ বলেন,“তালাকনামায় যেসব স্বাক্ষীর নাম আছে, তারা কেউই পরিচিত না। এমনকি তালাক নিয়ে রিনা কখনো কিছু বলেনি। আমার মনে হচ্ছে,এটা একটি প্রতারক চক্রের কাজ। তাকে ফাঁদে ফেলে অপহরণ করা হয়েছে।”

রিনার কাছ থেকে নিখোঁজের সময় প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ লক্ষাধিক টাকা ছিল বলেও তিনি জানান। তার ধারণা,এসব লোভেই কেউ হয়ত তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

অসহায় সন্তান আর প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত
রিনার নিখোঁজ হওয়ার পর থানা তদন্তে গতি নেই বলে অভিযোগ পরিবারের। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রানা প্রতাপ বলেন,“মহিলাটি প্রাপ্তবয়স্ক। তিনি স্বামীর কাছে তালাকনামা পাঠিয়েছেন,সে কারণে আমরা বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছি।”

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—প্রাপ্তবয়স্ক হলেই কি একজন গৃহবধূ এভাবে নিখোঁজ হয়ে যেতে পারেন? সন্তানদের কোনো খবর না দিয়ে,স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা নিয়ে হঠাৎ উধাও হওয়া—এটা কি নিছক স্বেচ্ছায় গমন?

একটি পরিবারের আর্তনাদ
রিনার মা নেই,বাবা বেঁচে নেই। তার ছেলেমেয়েরাই এখন তার অস্তিত্বের একমাত্র সাক্ষ্য। তারা এখনো অপেক্ষায়—কোনো একদিন হয়ত মা ফিরবে।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন,“আমার বাচ্চারা মায়ের নাম ধরে কাঁদে। আমি বলি, মা এসেছে—ওরা ছুটে আসে দরজায়, কিন্তু মাকে পায় না। এই কষ্ট কেউ বোঝে না।”

এই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তালাকনামার রহস্য উদঘাটিত হয়নি। পুলিশ বলছে,তদন্ত চলছে। তবে পরিবার বলছে,সময় যত যাচ্ছে,আশাও তত নিভে যাচ্ছে।

মানবিক আবেদন:
একজন মায়ের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া শুধু একটি সংবাদ নয়—এ এক জীবন্ত আতঙ্ক,একটি অসহায় সংসারের ক্রমাগত ভেঙে পড়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে পরিবারের আকুল অনুরোধ,রিনাকে খুঁজে বের করতে যেন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হয়।