মোঃ রনি রজব ভোলাহাট উপজেলা (প্রতিনিধি):-
দালালের মাধ্যমে নয়, তথ্য ও প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ গেলে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত হবে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইউএনও
দালালের মিথ্যা প্রলোভনে পা না দিয়ে তথ্য জেনে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ গেলে অভিবাসন নিরাপদ হবে এবং মানব পাচারের ঝুঁকি কমবে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি অনিরাপদ অভিবাসনই মানব পাচারের আওতায় পড়ে, যা অত্যন্ত ভয়ানক। - বলে মন্তব্য করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার সহকারী কমিশনার( ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত ইমপ্রূভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পের অধীনে আয়োজিত উপজেলা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। নিজ বক্তব্যে তিনি আরও বলেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে অনিরাপদ অধিবাসন ও মানব পাচারের ঝুঁকি কমে ও বেশি বেতন পাওয়ার পাশাপাশি আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। সীমান্তবর্তী উপজেলা হাওয়ায় ভোলাহাটের মানুষের মানব পাচারের ঝুঁকির মধ্যে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমাদের সচেতন হয়ে এলাকায় মানব পাচারের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই এলাকার মানুষ সুন্দর জীবনের স্বপ্নে ও পরিবারের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে নিজের সহায়-সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে যাই, কিন্তু অনেকেই নানা কারণে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসে। তাই ব্র্যাকের মত আমাদের সবার উচিত বিদেশ থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা এই মানুষদের পাশে থাকা।
সরকারি সহায়তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব আরোপ করে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: শোভন পাল মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন বিদেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরে এলে তাদের মানসিক পরিস্থিতি ভালো থাকে না তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বাস্তবায়িত (প্রত্যাশা-২) প্রকল্প এ সমস্ত মানুষকে মনোসামাজিক কাউন্সিলিং সেবা দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনছে। ভোলাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম দালাল চক্রের প্রলোভন এড়াতে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সভায় বলেন, ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে কেও যেন গেম বা জিম্মি না হয়, সে বিষয়ে এলাকায় সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। নিজের বক্তব্যে তিনি আরও যোগ করেন, দক্ষ না হয়ে বিদেশ গেলে প্রতারণার শিকার হতে হয় এবং কম বেতনের পাওয়া,কর্মঘণ্টার বেশি কাজের মতো শ্রম শোষণের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় অনেকেই। তাই আমাদের দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে হবে।
কর্মশালায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কার্যক্রম, বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের টেকসই পুনরেকত্রীকরন ও নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সেক্টর স্পেশালিস্ট ইকোনমিক রিন্টিগ্রেশন মো: হুমায়ুন কবির। আলোচনায় অংশ নেন ভোলাহাট উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম কবিরাজ উপজেলা আসার ভিডিপি অফিসার মো: সামিউল বাশার দৈনিক বরেন্দ্র নিউজ পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ জামিল হোসেন প্রবাস বন্ধু ফোরামের সদস্য ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়ক মোছা: মোমেনা খাতুন এবং সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের রিজিওনাল এমআরএসসি কো-অর্ডিনেটর মোঃ শামসুজ্জামান। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলার অভিবাসন বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা বৃন্দ, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, প্রবাস বন্ধু ফোরামের সদস্যবৃন্দ, বিদেশ ফেরত অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও- ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এ-ই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবন জেলা সমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ ফেরতদের পুনরেকত্রীকরন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে এডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।