মাগুরায় নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বেআইনি বরখাস্ত, সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নানকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বাংলাদেশ গেজেটের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে দণ্ড দিতে হলে এডহক কমিটির অন্তত তিনজন সদস্যের সাক্ষর ও সম্মতি থাকতে হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন শিপন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাত্র দুইজনের স্বাক্ষর নিজে এবং সদস্য মোহাম্মদ আল মামুনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
রেজুলেশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এডহক কমিটির অপর সদস্যের সাক্ষর ছাড়াই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ গেজেটের ৬৫ ও ৬৬ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, সভাপতি এককভাবে বা কোরাম পূর্ণ না করে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীকে দণ্ড দিতে পারেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন শিপন প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নান সাহেবের কাছে বিভিন্ন সময় অর্থ দাবি করেছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে তাঁকে হুমকি প্রদান করে আসছেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকও (অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার) সভাপতি সাহেবের প্ররোচনায় প্রধান শিক্ষককে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি সাহেব বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গাছ অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করেছেন। গাছ কাটার ঐ সকল ছবি ও ভিডিও স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছেন,যা এলাকাবাসীর জানা।
সম্প্রতি সভাপতি মুনির হোসেন রোমানকে দিয়ে বিদ্যালয়ে ১৩টি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, যা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ গেজেটের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী, এডহক কমিটির সভাপতির এ ধরনের নিয়োগ প্রদানের কোনো ক্ষমতা নেই।
এছাড়া ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সভাপতি পদে থাকার যোগ্যতা হারান। এ কারণে স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসী সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন শিপনের অপসারণ দাবি করেছেন।তবে এ বিষয়ে সভাপতি মির্জা ওয়ালিদের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার শেখ আব্দুল মান্নান হাইকোর্টের stay order নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এসময় নাকোল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক আদালতের আদেশের কপি দেখালেও মুনির হোসেন রোমান দায়িত্ব ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। পুলিশ কর্মকর্তার বোঝানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে মিছিল শুরু করে। একপর্যায়ে উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীদের নিক্ষিপ্ত ঢিলে মুনির হোসেন সামান্য আহত হন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পুলিশের গাড়িতে করে বাড়ি ফেরেন।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি এই মূহুর্তে নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন শিপনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ, হুমকির শিকার প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নানকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ন্যায়বিচার প্রদানের মাধ্যমে স্কুলটির লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। তানাহলে এলাকায় আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।আমরা সকলেই চাই আদালতের রায় মেনে স্কুলটির সঠিক সমাধান এবং দূর্নীতি ও অনিয়মের সঠিক বিচার।