দেশের জ্বালানি ও শিল্পখাত এখন কার্যত জটের মধ্যে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলেও পেট্রোলিয়াম ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ নন। অথচ এই দুই খাতই পরিদপ্তরের মূল কাজের পরিধি। ফলে শিল্পকারখানার অনুমোদন, বিনিয়োগ ও উৎপাদন কার্যক্রমে অভূতপূর্ব জটিলতা তৈরি হয়েছে।
২০ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদনে একটি গ্যাস বোতলজাত করণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ পরিস্থিতিকে সরাসরি “*ছাগল দিয়ে হাল চাষ করার মতো*” আখ্যা দেন। তাঁর মতে, একজন যোগ্য পেট্রোলিয়াম বা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে বিস্ফোরক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মান ও কার্যকারিতা বহুগুণে বাড়বে।
অনুমোদনের নামে দীর্ঘসূত্রতাঃ
পরিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রায় ১২৭টি শিল্প প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া বিভিন্ন অজুহাতে আটকে আছে। এর মধ্যে ৪৭টি কেমিক্যাল কারখানা, ৩৮টি পেট্রোলিয়াম সংরক্ষণ ও বিতরণ ইউনিট এবং অন্তত ২০টি এলপিজি টার্মিনালের লাইসেন্স ঝুলে আছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব বলছে, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনে এখন গড়ে ৬-৯ মাস সময় লেগে যাচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই সময়সীমা সর্বোচ্চ ২ মাস হওয়ার কথা।
উদ্যোক্তাদের কান্নাঃ
রাজধানীর একটি তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন,
“আমরা কাগজ জমা দেওয়ার পর ছোটখাটো টেকনিক্যাল অজুহাতে ফাইল ফেরত দেওয়া হয়। অথচ এসব সমস্যা কোনো কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে পারতেন।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের এক কেমিক্যাল কারখানার মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে বলেন, “কারখানার সম্প্রসারণে নতুন ট্যাঙ্কার স্থাপনের অনুমোদনের জন্য আমরা ছয় মাস ধরে দৌড়াচ্ছি। কিন্তু সিদ্ধান্তই হচ্ছে না। এই দেরিতে আমাদের প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।”
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এই অচলাবস্থার কারণে ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একাধিক প্রস্তাবও স্থবির হয়ে আছে।
মন্ত্রণালয়ের নীরবতাঃ
গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় এখনো নীরব। অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ভুল পদায়নের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ভেতরেও আলোচনা হচ্ছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
প্রশ্নের মুখে নীতিনির্ধারণঃ
শিল্পমহল প্রশ্ন তুলছে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও শিল্পোন্নয়নের মতো স্পর্শকাতর খাতে কেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অদক্ষ নেতৃত্ব বসানো হলো? তারা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ শিল্পোন্নয়নের প্রতিযোগিতায় প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে পিছিয়ে পড়বে।