অবশেষে উদ্বোধন হল গাইবান্ধা জেলার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার হতে চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সাথে, সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত ১৪৯০ মিটার পিসি গার্ডার "মওলানা ভাসানী" (চিলমারী-হরিপুর) সেতুটি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান কাটিয়ে অবশেষে স্বপ্নের "মওলানা ভাসানী" (চিলমারী হরিপুর) সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (২০শে আগস্ট) দুপুর ১২.৪৫ মিনিটের দিকে মুল ফলক উন্মোচন করে, আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করেন "অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া" এর আগে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, রংপুর থেকে সড়ক পথে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা হয়ে সেতুস্থলে পৌঁছান। পরে সেতুর উত্তর পাশে মুল ফলক উন্মোচন করে সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার গাইবান্ধা। প্রকল্প পরিচালক এলজিইডি, নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি গাইবান্ধা, স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক জনাব মাহমুদুল হাসান এনডিসি, মাননীয় উপদেষ্টার একান্ত সচিব জনাব আবুল হাসান, মাননীয় উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব জনাব আয়মন হাসান রাহাত, জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব সালাউদ্দিন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জনাব মাহফুজুল আলম ভূঁইয়াসহ আরও উপস্থিত ছিলেন। পরে উদ্বোধনের করে সেতু ঘুরে গোলচত্বর এলাকায়, এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জন প্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহন করেন। এদিকে, উদ্বোধনের আগেই সেতু দেখতে ভিড় করেন গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার হাজার হাজার মানুষ। নানা বয়সী মানুষের ঢল নামে সেতুর ২ প্রান্তে। শিশু, তরুণ, বয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই যেন এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে, সেতুর ২ এলাকায় ভিড় জমান, প্রায় ২০থেকে ৩০হাজার মানুষ। সেতুর দুই প্রান্তে বিরাজ করেছে, উৎসবমুখর পরিবেশ। সেতুতে মানুষের ভিড় সামলাতে না পেরে হিশশিম খায় পুলিশ ও সেনাবাহীনির সদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীরা। দীর্ঘ এই সেতুটি "গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী" পর্যন্ত বিস্তৃত। সেতুর দৈর্ঘ্য ১হাজার ৪৯০মিটার, প্রস্থ ৯.৬০মিটার, লেন সংখ্যা ২টি এবং মোট স্প্যান বসানো হয়েছে ৩১টি। এটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নির্মিত স্থানীয় সরকার বিভাগের সবচেয়ে বড় সেতু। "চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন" এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)-এর অর্থায়নে নির্মিত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। এর আওতায় ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদী শাসন এবং প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে জানান যায়। শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন হবে দ্রুত ও সহজতর। গড়ে উঠতে পারে শিল্পকারখানা, তৈরি হতে পারে অর্থনৈতিক অঞ্চল। সৃষ্টি হতে পারে হাজার হাজার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থায় নয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি আনবে। গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম তথা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে জানান তারা। এদিকে উদ্বোধনের পর ২ জেলার মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।