চুয়াডাঙ্গা জেলায় আলমডাঙ্গা উপজেলার রামদিয়ায় কায়েদ পাড়া গ্রামে পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক গ্রাম্য সালিশে দু’পক্ষকে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুরুষ ও নারীর মধ্যে একজন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলেও, অপরজন অর্থ দিতে না পারায় তার স্বামীর মালিকানাধীন একটি আলমসাধু গাড়ি জিম্মি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টার দিকে, উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রামদিয়া কায়েতপাড়া গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কায়েতপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সুজন (৩৫) দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার এক আলমসাধু চালকের স্ত্রী শারমিন খাতুনের (৩০) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। গত রোববার রাত আনুমানিক ১টার দিকে সুজন গোপনে শারমিনের ঘরে প্রবেশ করেন বলে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সুজনের স্ত্রী পারভিনা খাতুন একাই শারমিনের বাড়িতে হানা দেন। যদিও সে সময় সুজন শারমিনের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না।
পরে সুজনের স্ত্রী পারভিনা খাতুন এলাকার মাতব্বরদের সাথে নিয়ে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করে সোমবার বিকেলে গ্রাম্য মাতব্বররা সালিশ ডেকে দুই পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। সালিশে উপস্থিত ছিলেন মতিয়ার রহমান, আতিয়ার রহমান, সাইফুল, ফরজ মালিতা ও দ্বিন মোহাম্মদ সহ আরও অনেকে। মাতব্বররা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ার কারণে সেখানে কেউ কথা বলতে পারেনি।
সুজন তার অংশের ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও শারমিন তা দিতে ব্যর্থ হন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর শারমিনের স্বামী সলোকের মালিকানাধীন একটি আলমসাধু গাড়ি জোরপূর্বক নিয়ে যাই আওয়ামী পন্থি এই মাতুব্বর রা।
শারমিন অভিযোগ করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছাড়াই শুধু সুজনের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে জরিমানা করা হয়েছে। এখন আমার বাড়ির আলমসাধু গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এটা অন্যায়।”
এদিকে, স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, সালিশের নামে এই ধরনের অর্থদণ্ড ও ব্যক্তিগত সম্পদ জিম্মি করাকে তারা অন্যায় ও আইনের পরিপন্থী বলে মনে করছেন। সচেতন মহল বিষয়টিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে সালিশে উপস্থিত থাকা সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান বলেন, “আমি রোববার রাতে ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবে শুনেছি সুজন সোমবার সকাল ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার স্ত্রীকে মারধর করেছে। পরে গ্রামের মুরুব্বিদের সিদ্ধান্তে উভয়কে জরিমানা করা হয়। তবে আলমসাধু নিয়ে যাবার অভিযোগটি আমি জানি না।”
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের গ্রাম্য সালিশে অর্থদণ্ড আরোপ ও সম্পদ জিম্মি করার অধিকার নেই কারও। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগের বিচার গ্রাম্য সালিশে করা হলেও, আইন বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় ও সম্পদ জিম্মির ঘটনাটি বর্তমানে সামাজিক ও আইনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।