এম এস শ্রাবণ মাহমুদ স্টাফ রিপোর্টার:-
রাঙামাটি সদরস্থ কাউখালী উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রাম থেকে অপহরণের আটদিনপর পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুনের (২৫) দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই)২৫খ্রিঃ সকালে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকায় বস্তাবন্দি অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত মামুন উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রামের বাসিন্দা আলী আহম্মেদের একমাত্র ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
এর আগের দিন সোমবার (১৪ জুলাই)২৫খ্রিঃ মামুনের সাবেক কর্মচারী মোঃ কামরুল ইসলাম (৩০) ও তার স্ত্রী শিমা আক্তার'কে লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তার স্বীকারোক্তিতে আজ সকালে মামুনের দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কামরুলের স্ত্রী সাথী আক্তারকেও (১৯)।
গ্রেপ্তার কামরুল একই ইউনিয়নের ডাব্বুনিয়া এলাকার সেলিম সওদাগরের ছেলে। স্ত্রী সাথীকে নিয়ে রানীরহাট বাজার এলাকায় ৬ তলা ভবনে ভাড়ায় থাকেন।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে নিখোঁজ হন মামুন।
বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় স্ত্রী শিমা আক্তার তাকে ফোন করলে নাম্বার বন্ধ দেখায়,
একপর্যায়ে রাতেই স্ত্রীকে ফোন করে তিনি জানান, কিছু ঝামেলায় আছেন এবং তার দুটি ব্যাংক চেক রানীরহাট এলাকার একজনের কাছে পৌঁছে দিতে। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন মামুন।
পরদিন (৮ জুলাই) মামুনের স্ত্রীর ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে একটি কল আসে মামুনের নম্বর থেকে। সেই রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন অপহৃতের স্ত্রী।
এরপর তাকে উদ্ধারে অভিযানে নামে কাউখালী থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার করা হয় চেক গ্রহণকারী আনোয়ার (২০) নামে এক ব্যক্তিকে।
পরে তার দেওয়া তথ্যে উঠে আসে মামুনের সাবেক কর্মচারী কামরুলের নাম।
সোমবার তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে কামরুলকে গ্রেপ্তার করে কাউখালী থানা পুলিশ।
তার স্বীকারোক্তি মতে, আজ সকালে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখা মামুনের দিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ হেফাজতে কামরুল স্বীকার করেন, মামুনকে রানীরহাটে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে চায়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়।
এরপর স্ত্রী সাথী আক্তারের সহায়তায় হত্যা করে তার মরদেহ দ্বিখণ্ডিত করেন।
পরে বস্তায় ভরে কাউখালীর মাঝের পাড়া এলাকায় মাটিচাপা দেন।
কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম বলেন, মামুন ও কামরুল এক-সময় একই সঙ্গে পোলট্রি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রধান অভিযুক্ত কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চেক গ্রহণকারী আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক, ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) নাদিরা নুর, কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম ও কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।