এম.মাসুম আজাদ,ঝিনাইদহ ব্যুরো প্রধান:-
ঝিনাইদহে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অধিকাংশ জনগণেরই অভিযোগ চিকিৎসকের মাত্রাতিরিক্ত ভিজিট নেবার বিষয়ে। এছাড়াও চিকিৎসা সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ রয়েছে , ডায়গনস্টিক সেন্টারের কমিশন বাণিজ্যের ফাঁদে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি করে নাজেহাল করা হয় রোগীদের।
৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত রোগী দেখার ভিজিট নিচ্ছেন ঝিনাইদহের বিভিন্ন চিকিৎসক।
এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ভিজিট নেবার কারণে ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা বাণিজ্যের কবলে জেলার নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনেক চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের চেয়ে টেস্ট নির্ভর চিকিৎসার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়গনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ অপচয় করা হচ্ছে।
সামান্য সর্দি-জ্বরের জন্যও একগাদা টেস্ট লিখে দেওয়া হয়, অথচ অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোর প্রয়োজনই থাকে না। এতে করে রোগী যেমন আর্থিকভাবে চাপে পড়ে, তেমনি জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর থেকে বিশ্বাসও উঠে যাচ্ছে জনগণের ।
এই সকল কারণে অধিকাংশ জনগণ অসুস্থতার প্রাথমিক সময়ে চিকিৎসা নিতে চিকিৎসকের কাছে না যেয়ে নিজেরাই ফার্মেসী থেকে ঔষধ ক্রয় করে সেবন করছেন,ফলে দেখা যায় অনেকেই মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েন, সুস্থ না হয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন, যার ফলে পরবর্তীতে তার চিকিৎসা ব্যয় আরো বৃদ্ধি পায়। পড়েন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ।
ঝিনাইদহের সদর হাসপাতালের আসেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বৈধ অবৈধ একাধিক ডায়গনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি ক্লিনিক, যাদের অধিকাংশের সাথেই সদর হসপিটালের ডাক্তার'রা কমিশনের গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ।
জেলার একাধিক মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা সেবা সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলেও বর্তমানে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বৃহৎ একটা জনগোষ্ঠী। সরকারি হাসপাতালে ভিজিটের হাত থেকে রক্ষা পেলেও জবাই হতে হচ্ছে টেস্ট বাণিজ্যের ফাঁদে। চিকিৎসকের পছন্দ অনুযায়ী ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট না করালে পুনরায় টেস্ট করতে হয় অথবা চিকিৎসকের অবহেলা পেতে হয়।
অন্যদিকে বেসরকারি ক্লিনিকে ডাক্তারের লাগাম ছাড়া ভিজিট ও অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বাণিজ্যের ছুরিতে জবাই হচ্ছে চিকিৎসা সেবাপ্রার্থী জনগণ। ডাক্তার ভিজিট,টেস্ট, রিপোর্ট দেখার ভিজিট, ফলোয়াপ রোগীর ভিজিট সব মিলিয়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসা শুরু হবার আগেই গুণতে হয় হাজার হাজার টাকা, যেটা বহন করা বর্তমানে অনেকের জন্যেই সাধ্যের বাইরে।
ডাক্তারের ভিজিট যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি ভাবে নির্ধারন করা হয়২০২৩ সালে। একবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার ফলে ইচ্ছে মতো স্বেচ্ছাসেবী হয়ে উঠেছেন অধিকাংশ চিকিৎসক। তবে গতানুগতিক সকলের বাইরেও অনেক ভালো ও বিশেষত চিকিৎসক আছেন যারা সকলের কথা বিবেচনা করে সাধ্যের মধ্যেই ভিজিট নিয়ে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন, অতিরিক্ত ঔষধ বা টেস্ট বাণিজ্যের সাথেও তিনারা যুক্ত হোন না।
ঝিনাইদহের সকল জনগণের চাওয়া অবৈধ ভুইফোঁড় লাইসেন্সবিহীন ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বন্ধ করে চিকিৎসা সেবা সকলের জন্যে নিশ্চিত করতে। ডাক্তারের ভিজিট সহনশীল সীমায় নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্ধারণ করা হোক।