চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের বি.আর.এম প্রাইভেট অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারও ভুল অপারেশনে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত তরুণীর নাম ইয়াসমিন খাতুন (১৯)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের বোড়াই গ্রামের মিন্টু শেখের মেয়ে। মাত্র আড়াই মাস আগে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয় একই গ্রামের সোলাইমান নামে এক যুবকের সঙ্গে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে গত বৃহস্পতিবার সকালে ইয়াসমিনকে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারের বি.আর.এম প্রাইভেট অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানানো হয়, তার এপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়েছে এবং তাৎক্ষণিক অপারেশন প্রয়োজন। পরে বিকেল ৩টার দিকে ডা. হাসানুজ্জামান নুপুরের মাধ্যমে অপারেশন করা হয়।
অপারেশনের পর থেকেই ইয়াসমিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রোগীর স্বজনরা বারবার অনুরোধ করলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে বাইরে নেওয়ার অনুমতি না দিয়ে আশ্বাস দেন—“অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।” কিন্তু অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। অবশেষে রাত ৩টার দিকে ইয়াসমিন মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে বিক্ষুব্ধ একদল লোক ক্লিনিকে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে সরোজগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই ক্লিনিকে এর আগেও এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর ২০২৪ সালে একই স্থানে আসানান্দপুর গ্রামের চাঁদ মনি নামের এক তরুণী ভুল অপারেশনের শিকার হয়ে মারা যান। সে সময় স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ক্লিনিকটি আবারও চালু হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বারবার ভুল চিকিৎসা আর অপারেশনের নামে জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। এখনই যদি ক্লিনিকটি বন্ধ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও প্রাণহানির শিকার হতে হবে। প্রশাসনের উচিত এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”
এদিকে ক্লিনিকের পরিচালক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মেয়ের মৃত্যুর বিষয়ে ইয়াসমিনের বাবা মিন্টু শেখ বলেন, “আমার মেয়ে বৃহস্পতিবার পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়। ক্লিনিকের লোকজন বলে এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে, অপারেশন করতে হবে। বিকালে অপারেশনের পরই সমস্যা শুরু হয়। আমি বারবার বলেছি অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে, কিন্তু তারা বলে ‘ভয় নাই, ঠিক হয়ে যাবে’। শেষ পর্যন্ত রাত ৩টায় আমার মেয়ে মারা যায়। তবে আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না, আল্লাহ তাকে যতটুকু হায়াত দিয়েছেন, ততটুকুই বাঁচলো।”
তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা আসেনি। ইয়াসমিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে ময়নাতদন্ত ছাড়াই, শুক্রবার বাদ জোহর নিজ গ্রামে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই মৃত্যু আর কতবার? ভুল চিকিৎসার নামে এমন প্রাণহানি ঠেকাতে এখনই চাই প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ।