২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে '২০১৯-এনসিওভি' নামকরণ করে। পরবর্তীতে এটা মহামারি আকার ধারণ করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায়। পৃথিবীব্যাপী আন্তঃযোগাযোগ ও বহির্বিশ্ব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রত্যেকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সঠিক চিকিৎসা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে এক সময় সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করতে থাকে এবং গবেষণায় নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। অনেক চেষ্টার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার এবং ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে ভাইরাসটি। কিন্ত এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার লোক মারা যায়। এমন একটি পর্যায় এসে পৌঁছে-আক্রান্ত মানুষের পাশে কেউ থাকতে চায় না। আপনজরাও দূরে চলে যায়। স্ত্রী-সন্তান,বাবা-মা, আত্নীয়- স্বজন সকলের নিকট আক্রান্ত মানুষ হয়ে যায় অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়। এভাবেই দুইটি বছর মানুষ এই মহামারি রোগের কাছে অসহায়ত্ববোধ করে।
তারপর দুই বছর পর আরো শক্তিশালী হয়ে আবারও মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের মানুষ। ইতিমধ্যে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় ৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বুড়িচং উপজেলা হেলাল নামের এক ব্যক্তি রয়েছ। করোনা ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই আলোকে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পিপল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মোঃ জহিরুল হক বলেন, আমাদের প্রত্যেকের উচিত স্বাস্থ্য বিধি মানার সাথে সাথে ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলা। তাহলে এই রোগের ছোবল থেকে আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করবে।
ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মোঃ এনামুল হক শান্ত বলেন, যারা প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন- তারা প্রত্যেকেই মাক্স ব্যবহার এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা উচিত। কারণ ২০১৯ইং সালে অনেক প্রবাসী করোনার কারণে কর্ম হারিয়েছে। কেউ কেউ সচেতনতার অভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তাই প্রবাসীসহ সকলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেন।
বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মালেকুল আফতাব ভূইয়া বলেন,করোনাভাইরাসে বেশি ঝুঁকি রয়েছে গর্ভবতী নারী, বয়ষ্ক নারী ও পুরুষ, দীর্ঘদিন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি,স্বাস্থ্য কর্মীরা। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রেপিএন্টিজেন টেষ্ট কিটের চাহিদা জেলায় পাঠানো হয়েছে। আশা রাখি অতিদ্রুত কিটগুলো আমাদের হাতে পৌঁছবে। শীঘ্রই আমরা করোনা টেষ্ট এর জন্য বুথ তৈরী করবো। এখনো আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমানে করোনার টিকা মজুদ আছে। যদি আক্রান্তের হার বেড়ে যায়; তাহলে টিকা প্রদানের জন্য কেন্দ্র খোলা হবে। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো চিকিৎসক, ঔষুধ,অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত রয়েছে। আলাদা করে করোনা আইসোলেশন ওর্যাডের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া নাক মুখ ঢাকার জন্য মাক্স ব্যবহার করতে হবে। ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধৌত করতে হবে। আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে। অপরিস্কার হাতে নাক, মুখ, চোখ স্পর্স করা যাবে না। হাঁচি কাশির সময় বাহু, টিস্যূ, কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতে হবে। কারো করোনায় আক্রান্ত সন্দেহ হলে ঘরে থাকতে হবে এবং বেশি আক্রান্ত হলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে যেতে হবে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন,জেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় করোনা ভাইরাসের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাই সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচলা করতে হবে। সকলকে সচেতন থাকতে হবে।