ছোট্ট মাহির ও রাহিদ এসেছেন গোলাকান্দাইল কোরবানীর পশুর হাটে। তারা বলেন, গরু দেখতে এসেছি, পছন্দ হলেই কিনব। বাপ চাচাদের সাথে এসেছি।আমাদের পছন্দেই গরু কিনি প্রতি বছর। নিজে পছন্দ করে গরু নিার মজাই আলাদা। প্রতি বছরই হাটে আসি, পছন্দ মত গরু কিনে বাড়ি যাই। মজাই সজা।
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও কোরবানির পশুর হাটগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও চলছে পশু কেনাবেচা।
এ বছর ১৩টি হাটের ইজারা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও অনেকেই রাস্তার পাশে কৃত্রিম হাট বসিয়েছেন অনেকে। বেচা বিক্রিও জমে ওঠেছে। খামারিরা বলছেন, হাটগুলোতে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় বড় গরু নিয়ে কিছুটা চিন্তিত তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার উপজেলায় ১৩টি হাটে গরু-ছাগল বিক্রির জন্য প্রায় ১৬ হাজার কোরবানীর পশু রয়েছে।
জনতা স্কুলের মাঠে বসা পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও বিভিন্ন এলাকা থেকে খামারিরা তাদের গরু-ছাগল বিক্রির জন্য এনেছেন। সরবরাহ বেশি থাকায় হাটের আশপাশের সড়কেও পশু নিয়ে বসেছেন ক্রেতারা।
শতাব্দীর প্রাচীন এ পশুর হাটে নেই কোনো চাঁদাবাজি। প্রতি হাটে পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত পশু বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে গরু কিনতে আসা গোলজার হোসেন বলেন, গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। দেখতেছি, কি করা যায়, পছন্দ হলে বাজেটে মিলে গেলে ২ টা বড় গরু কেনার ইচ্ছা আছে।
স্থানীয় খামারিরা জানায়, এবার ভারতীয় গরু না আসায় তারা স্বস্তিতে আছেন। তবে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়া ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কারণে গরুর দাম কিছুটা বেশি। তারা জানিয়েছে, পশুগুলোকে হালালভাবে বড় করতে নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ঘাস, বিচালি, খৈল, ভুসি ও ভুট্টা খাওয়ানো হয়েছে।
মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পাইকাররা বেশি দাম হাকছেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। এখানকার স্থায়ী ও মৌসুমি খামারিদের পাশাপাশি অনেকেই বাড়িতে কোরবানির জন্য পশু পালন করেছেন। চাহিদার তুলনায় পশু বেশি থাকায় কোনো ঘাটতির আশঙ্কা নেই।
খামারি আব্দুল মান্নান, মফিজুর রহমান ও আবুল কালাম জানান, দিনে দিনে পশু খাদ্যের দাম বাড়ছে। ফলে গরু লালন-পালনের খরচ বাড়ছে। সেই তুলনায় তাদের লাভ থাকছে না।
বালিয়া গ্রামের শরীফ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ক্রেতা সমাগম ভাল। সরকার পরিবর্তনের পর বড় গরুর চাহিদা কমেছে বলে মনে হচ্ছে তার। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রতিদিনই হাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে এবার চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সাড়ে ৪ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার জানান। তিনি আরো জানান, উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার। বিপরীতে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৬ হাজার ৭৬৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু অন্যত্র পাঠানো যাবে।
এদিকে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় খামারিদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে বলে জানালেন রাতালদিয়া গ্রামের খামারি মো. হারুন। তিনি জানান, চার বছর ধরে তিনি গরু লালন-পালন করছেন। বড় আকারের গরু লালন-পালন করতে যে খরচ সেই অনুযায়ী দাম পাওয়া যায় না। ফলে বড় গরুর প্রতি আগ্রহ কম খামারিদের।
উপজেলার ১৩টি হাটে ৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তারা হাটে বিক্রি করতে আনা গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা দিচ্ছেন।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিদার্থে প্রতিটি হাটে আইনশ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকেও বিভিন্ন সংস্থার বাহিনী অবস্থান করছে। তাছাড়াও জাল টাকা সনাক্তকরন টিম, মোবাইল টিমও সক্রিয় রয়েছে।