রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শিশুতুলি গ্রামে রাতের আঁধারে গ্রামের কার্বারী শান্তি ময় চাকমার বাড়িতে সেনা তল্লাশি-হেনস্তা ও তিন ব্যক্তিকে নির্যাতনের প্রতিবাদে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাাবেশ করেছে সাজেক কার্বারী এসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার ৬ মে ২০২৬ সকাল ৯টায় কার্বারি এসোসিয়েশনের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উজোবাজার প্রদিক্ষণ শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে ও কার্বারী প্রবীন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, কার্বারী ধারাজ চাকমা, কার্বারী শুভ রঞ্জন চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবুধন চাকমা, নারী সমাজের প্রতিনিধি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বিরো চাকমা ও পিসিপি’র বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি পলেন চাকমা।
কার্বারী এসোসিয়েশন সভাপতি নতুন জয় চাকমা বলেন, গ্রামের একজন কার্বারীর বাড়িতে রাতের আঁধারে তল্লাশি ও তাকে হেনস্তা ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আমরা এ ধরণের আচরণ কোনভাবেই আশা করি না। আমরা শিশুতুলি গ্রামের কার্বারি শান্তিময় চাকমার বাড়িতে তল্লাশি-হেনস্তা ও তিন গ্রামবাসীকে মারধরের ঘটনায় বাঘাইহাট জোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ জবাব পেতে চাই। যথাযথ জবাব না পেলে আমরা বাঘাইছড়ি উপজেলার সকল কার্বারিরা মিলে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করবো।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে কোন কার্বারী যদি এ ধরনের হেনস্তার শিকার হয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
কার্বারী ধারাজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্বারীরা গ্রাম প্রধান। তারা পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীদের সামাজিক নিয়ম-শৃংঙ্খলা ও রীতি-নীতি সুরক্ষায় কাজ করে থাকে। তাদেরকে কেন সেনাবাহিনীর হেনস্তার শিকার হতে হবে? আজকে শিশুতুলি গ্রামের কার্বারী শান্তি ময় চাকমার বাড়িতে বিনা কারণে তল্লাশি ও তাকে হেনস্থা করার মাধ্যমে পুরো কার্বারী সমাজকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আগামীতে সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কার্বারীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কার্বারী শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, এ যুগে চুপ করে থাকা মানে নিপীড়কদেরকে নিপীড়ন করার সুযোগ দেওয়া। তাই স্ব-ভূমিতে টিকে থাকার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সাজেক নারী সমাজের প্রতিনিধি নিরুপা চাকমা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় সময় দেখা যায় সেনাবাহিনীর নির্যাতনের চিত্র। বঙ্গলতুলির শিশুতুলি গ্রামের কার্বারী শান্তিময় চাকমাকে হেনস্থা ও সাধারণ তিন গ্রামবাসীকে মারধরের ঘটনার নিন্দা জানাই। বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাসুদ রানা সাজেকে আসতে না আসতে আমাদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেক পোষ্টে কখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আটক করা, গাড়ি তল্লাশিসহ নানা হয়রানি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবুধন চাকমা বলেন, রাতের আঁধারে সেনাবাহিনী কর্তৃক শিশুতুলি গ্রামের কার্বারী শান্তি ময় চাকমার বাড়ি তল্লাশি ও তাকে হেনস্থা এবং তিন গ্রামবাসীকে মারধরের ঘটনা অমানবিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি সমাজে কার্বারি হচ্ছে গ্রামের প্রধান। তার বাড়িতে তল্লাশি ও তাকে হেনস্তা করা মানে সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন করা। কাজেই আমাদের আর চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। সকল অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তল্লাশির নামে জনগণের ওপর নিপীড়ন চলতে থাকলে তার বিরুদ্ধে আমাদেরও প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
যুবনেতা বিরো চাকমা বলেন, যেখানে অন্যায় হবে সেখানে প্রতিবাদ করতে হবে। আজকে কোন আইনে সেনাবাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামের কার্বারীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে, বিনা কারণে গ্রামবাসীদের নির্যাতন করছে? আর কোন অন্যায় সহ্য করা হবে না। অন্যায়কারীরা যতই শক্তিশালী হোক ন্যায়ের শক্তি দিয়ে তাদেরকে পরাস্ত করতে হবে।
পিসিপি নেতা পলেন চাকমা বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন দিন দিন বেড়ে চলেছে। শুধু বাঘাইছড়িতে নয়, আজ সকালে খাগড়াছড়ি সদর ইউনিয়নের ঠাকুরছড়া ও মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ধুল্ল্যে এলাকায় পাহাড়ি গ্রামে তল্লাশির নামে জনগণকে হয়রানি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এ ধরণের অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।