Crime News tv 24
ঢাকারবিবার , ৪ মে ২০২৫
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পরাধীনতার শিকলে গণমাধ্যম!

admin
মে ৪, ২০২৫ ১২:২১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

– মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী:-

৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস—এটি একটি প্রতীকী দিন হলেও, এর তাৎপর্য এখন আর কেবল প্রতীকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তথ্যপ্রবাহের ওপর নিয়ন্ত্রণ, মতপ্রকাশে বাধা এবং সাংবাদিকদের হয়রানির প্রেক্ষাপটে এই দিবসটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—স্বাধীনতার আসল রূপ আজ কতটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম, যা হওয়ার কথা ছিল সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের জবাবদিহির প্রধান হাতিয়ার, সেটিই এখন নানা ধরনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

সাংবাদিকতা কেবল খবর পরিবেশনের পেশা নয়—এটি মানুষের জানার অধিকার রক্ষার এক নিরন্তর লড়াই। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলভিত্তি হিসেবে নির্ভীক, পক্ষপাতহীন ও অনুসন্ধানধর্মী সংবাদমাধ্যম অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক দেশেই আজ গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করতে আইনি ও প্রশাসনিক ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, কিংবা সরাসরি হুমকি—এসবই এখন সংবাদমাধ্যমের দৈনন্দিন বাস্তবতা।

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে ‘তথ্যযুদ্ধ’। তথ্যকে অস্ত্র বানিয়ে ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যা, অন্যদিকে সত্য বলার মানুষদের কণ্ঠরোধে চলছে সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা। একুশ শতকের এই সময়ে সাংবাদিকেরা কেবল খবর সংগ্রাহক নন, তারা হয়ে উঠেছেন সত্য ও ন্যায়বিচারের অগ্রসৈনিক। ২০২৪ সালেই সংবাদ প্রকাশের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিক—এটি নিছক পরিসংখ্যান নয়, বরং সভ্যতার বিবেকের ওপর এক গভীর আঘাত।

বাংলাদেশেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে বেড়েছে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট প্রভাব। সাংবাদিকেরা অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করছেন ভয় ও চাপে, যার ফলে আত্মসংযমই হয়ে উঠেছে টিকে থাকার কৌশল।

অথচ স্বাধীন সাংবাদিকতার লক্ষ্য হওয়া উচিত—জনগণের পক্ষ থেকে সত্য উচ্চারণ এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে জবাবদিহির আওতায় আনা। রাষ্ট্রপ্রেম মানে অন্ধ আনুগত্য নয়; বরং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়াই প্রকৃত দায়িত্ব।

তবে একমাত্র রাষ্ট্রকে দায়ী করেই দায়িত্ব শেষ করা যায় না। সাংবাদিকতা পেশাকেও দেখতে হবে আত্মসমালোচনার আয়নায়। আজকের সাংবাদিকতায় অনেক সময়ই দেখা যায় বিবৃতি-নির্ভরতা, তথ্য যাচাই ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ, কিংবা ‘নির্দেশনা মোতাবেক’ কাজ করার প্রবণতা। কিছু গণমাধ্যম কর্পোরেট স্বার্থের দাসে পরিণত হচ্ছে, যা সাংবাদিকতার মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।

 

ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতার প্রকৃতি পাল্টে গেছে। এখন অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ‘নিজস্ব সাংবাদিক’ হয়ে উঠেছেন—এটি যেমন গণমাধ্যমকে আরও গণমুখী করেছে, তেমনি বিভ্রান্তির ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। Deepfake, প্রোপাগান্ডা বট, কিংবা ফেক নিউজের যুগে একজন সাংবাদিককে হতে হবে প্রযুক্তি-সচেতন, তথ্য-নির্ভর এবং নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ।

 

এই দমবন্ধ পরিবেশেও একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক সাহসের সঙ্গে সত্য তুলে ধরছেন। তারা নিজেরা তৈরি করছেন বিকল্প প্ল্যাটফর্ম, তুলে ধরছেন নিষিদ্ধ, উপেক্ষিত বা বিতর্কিত তথ্য, বলছেন যেসব কথা বললে ‘অবাঞ্ছিত’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকেই গ্রেফতার, হয়রানি কিংবা হুমকির মুখেও থেমে যাচ্ছেন না। এটাই সাহসী সাংবাদিকতার নতুন ভাষ্য—যেখানে সংবাদ শুধু পণ্য নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার ফল।

 

অতএব, আজকের দিনে আমাদের ভাবতে হবে—আমরা কেমন গণমাধ্যম চাই? একটি সত্যনিষ্ঠ, স্বাধীন ও মানবিক সাংবাদিকতা ছাড়া একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র কিংবা সচেতন সমাজ কল্পনা করাও সম্ভব নয়। আইনগত সুরক্ষা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা—এই চারটি স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে একটি মুক্ত ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম।

গণমাধ্যম শুধু খবর দেয় না—এটি সমাজের বিবেক, ন্যায়ের কণ্ঠস্বর এবং ভবিষ্যতের দিশারি। আজকের বিভক্ত, বিভ্রান্ত ও অনিশ্চয়তাপূর্ণ বিশ্বে, একমাত্র দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই পারে সত্য, মানবতা ও একতার সেতু গড়ে তুলতে।

 

লেখক
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
কবি, গবেষক, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
বিভাগীয় ব্যুরো চিফ, সিলেট, CNtv24.com
ইমেইল: pressmuazzambd@gmail.com