নড়াইল সদরের শাহাবাদে সরকারি জায়গা থেকে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ১০৯ টি গাছ কর্তনের ঘটনায় ঘটেছে। ২৯ এপ্রিল সদর উপজেলা ভুমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী অভিযান চালিয়ে কাটা গাছের অংশ জব্দ করেন। ১ মে ঘটনার সাথে জড়িত শাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান,বেসরকারী সংস্থা প্রশিকার এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাবউদ্দিন সহ ১৩ জনের নামে সদর থানায় মামলা করে শাহবাদ ইউনিয়ন ভুমি অফিসের নায়েব মশিউর রহমান। মামলার বাকিরা স্থানীয় প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি সহ ১১ জন। মামলা নং-২৫/২০২৫
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে মেহগনি ও আম গাছের চারা রোপণ করেছিলেন বেসরকারী সংস্থা প্রশিকা। সেসময় সড়কটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় মনে করে জমির মালিক ইউনিয়ন পরিষদ এবং দেখভালের জন্য স্থানীয় প্রভাতী যুব সংঘের সঙ্গে একটি ত্রি পক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০ বছর পর ২০২৯ সালে গাছগুলো বিক্রির কথা,কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের সঞ্চালন লাইনে কাজে গাছগুলো বাধা হওয়ায় তা কেটে বিক্রির উদ্যোগ নেন চুক্তি করা তিনটি পক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালেই পরবর্তীতে সড়কটি সরকারী খাস খতিয়ান ভুক্ত হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে সড়কের এ সকল গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে প্রশিকা, ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও প্রভাতী যুবসংঘের সদস্যরা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন প্রভাতী যুবসংঘের সদস্যরা।
প্রশিকা নড়াইলের ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, গাছ কর্তনের জন্য তিনি ইউএনও বরাবর আবেদন করা হয়েছিলো, কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয় নি। কয়েকদিন আগে মেম্বর ইব্রাহিম ফোন দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ গাছের যে ডালপালা কাটা হয়েছিল সেগুলো বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে মনে করে আমি তাঁদের বিক্রি করে দিতে বলি। এরপর কীভাবে কারা গাছ কেটেছে সেটা জানি না।
স্থানীয়রা বলছে, প্রভাতী যুব সংঘের সদস্যদের এই গাছ বিক্রির ইন্ধন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইব্রাহিম শেখ। বিষয়টি জানতেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। তবে গাছ কাটাকাটির সময় প্রশিকার কাউকে স্থানীয়রা উপস্থিত থাকতে দেখে নি।
এ ব্যাপারে জানতে ইউপি সদস্য ইব্রাহিমকে ফোন দিলে তিনি ঘটনা অস্বীকার করে বলেন,আমি এই ঘটনার স্বাক্ষী হিসেবে আছি।
ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কর্তনের অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদনে তিনি সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘ, এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু না।
নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, রাস্তাটি ২০১৫ সালে সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায়। খাস জমি থেকে এভাবে গাছ কেটে নেওয়া সম্পূর্ন অবৈধ। প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি করা হয়েছে। শাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান, প্রশিকা এবং তাদের সংগঠন জড়িত থাকার প্রমান মিলেছে।