তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং তিস্তা মহা পরিকল্পনা অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে এলাকাবাসীর সাথে এবার মাঠে নেমেছে বিএনপি। এই লক্ষ্যে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশ সহ নানা কর্মসূচি পালন করছে দলটি। “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” স্লোগানে নীলফামারী জেলার তিস্তা ব্যারেজের পশ্চিম পাশ্বে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের দুপাশের লাখো মানুষ এ অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশে অংশ নেন।তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির আয়োজনে, রংপুর বিভাগের ৫ জেলার ১১ (এগারো) পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৭ তারিখ লালমনিরহাট জেলার জিয়া সেতুর পাশে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসময় দুই দিনব্যাপী আন্দোলনে বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলু, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর (অব,) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম, শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির চেয়ার পারর্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ জাতীয় পাটি-জেপি সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পাটি সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সারাদিন ও রাতব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন কাহিনী, নাটক, জারি গান, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, যাত্রাপালা, গম্ভীরা, নেতাদের বক্তব্য ও প্রদর্শনী সহ আরো অনেক কিছু। এ কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী দিনে ভারতকে চাপে রাখা যাবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান এলইডির মাধ্যমে জেলার সব পয়েন্টে একযোগে প্রচার করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে, রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে অনলাইনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বললেন, উত্তর অঞ্চলের পানির এই ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত মানুষেরা আজকে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪ টি অভিন্ন যে নদী এই পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি, এটি কোন কারো করুণার বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের প্রাপ্য। এটি বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য। অথচ আমরা কি দেখছি? আন্তর্জাতিক নদী আইন তিস্তা নদীর পানি ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আজকে আমাদের উত্তর অঞ্চলের মানুষদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এই পানি বন্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষের সাথে অপ্রতিবেশী মূলক আচরণ করিয়েই চলেছেই। আজকে প্রায় ৫০ বছর হলো ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায় নাই। এখন আবার তিস্তা বাংলাদেশের জন্য আর একটা অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আমাদের প্রতিবেশী উজানের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করেছে। করে তিস্তার স্বাভাবিক পানিকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তাদের এই অপ্রতি বেশি আচরণের কারণে আজকে উত্তর অঞ্চলের লাখো কোটি জনগণ বন্যা, খরায় দুর্বিষহ জীবন পার করছে। পানির অভাবে তিস্তার বুকে আজ ধু বালুচর, একদিকে পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল। আবার কখনো হঠাৎ করে উজান থেকে ছেড়ে দিচ্ছে পানি। এই পানির কারণে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, ভিটে মাটি, কৃষকের আবাদি ফসল ভাসিয়ে দিচ্ছে। প্রত্যেক বছরে কখনো কখনো হয়েছে এই উত্তরঞ্চালে। ভাঙ্গন তো আছেই। প্রতিবছর লক্ষ-কোটি আর্থিক ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্ট এদেশ থেকে একজন স্বৈরাচার খুনি পালিয়ে গিয়েছে। এই স্বৈরাচার একবার একটা কথা বলেছিল, ভারতকে আমি যা দিয়েছি তা সারা জীবন মনে রাখবে। কিন্তু ভারত শুধু এই স্বৈরাচারকেই মনে রেখেছে, দেশের জনগণকে তারা মনে রাখে নাই। সারা বিশ্ব জুড়ে কিন্তু সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা সমাধান কিংবা পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত থাকে। নিজ নিজ দেশের স্বার্থের রক্ষা করে প্রত্যেকটা দেশের সমস্যা গুলো সমাধান করে।
এটাই হলো কূটনৈতিক নীতি। বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু ব স্থায়ী মৃত্যুর বলতে কিছুই নেই, বরং একটা দেশের সঙ্গে অপর দেশের হবে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা,, ন্যায্যতা এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে সম্পর্ক রক্ষা করার ক্ষেত্রে নিজ দেশে এবং জনগণের স্বার্থ হবে প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার। এ কারণে বিএনপি’র স্লোগান সবার আগে বাংলাদেশ। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আর কাঁটাতারে বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে চায় না। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের রক্তাক্ত মরা দেহ আর বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয় বাড়িতে যদি দেরি করে তিস্তা চুক্তি করতে যদি অনীহা দেখায় তাহলে দেশ এবং জনগণের স্বার্থে, জনগণকে বাঁচাতে, কৃষি কে বাঁচাতে,কৃষককে বাঁচাতে, নবীকে বাঁচাতে নাব্যতা রক্ষা করতে তিস্তা সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদেরকে আমাদের বাঁচার পথ বুঝে নিতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সকল সম্ভাব্য বিকল্পকে কাজে লাগাতে হবে। এই কারণে আমরা মনে করি পানির ন্যাযে হিস্যা আদায়ের করতে জাতিসংঘ সহ সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো দাবি জানানো হবে। বাংলাদেশের দাবি তুলে ধরতে হবে। আপনারা জনগন যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল বিএনপি কে আগামীদিনে ক্ষমতার আসিনে বসান তাহলে আমরা অগ্রধিকার ভিত্তিতে তিস্তা নদীতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো, সব ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করবো ইনশাল্লাহ।
কর্মসূচিতে তিস্তা অঞ্চলের দুইপারের লাখো সাধারণ জনগনসহ দলের হাজারো নেতাকর্মীরা এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।