১৯ নভেম্বর বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে তৃতীয় তলা মাওলানা মোঃ আকরাম খা হলে বায়রা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট আয়োজিত মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে ১০ টি শর্ত প্রত্যাহার, সৌদি আরবে পূর্বের মত ২৪ টি ভিসা পর্যন্ত সত্যায়ন ব্যতীত বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান, বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব জনাব ফখরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ ও মামলাকারীর শান্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বায়রার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম।
তিনি বলেন, আসন্ন রায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে সিন্ডিকেটের মাফিয়াদের ইন্ধনে সিন্ডিকেট বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা দেয়ার অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে, যাতে করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন শক্ত প্রতিপক্ষ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। উল্লেখ্য গত ৪ অক্টোবর ২০২৫ বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম সহ দুটি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকের নামে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বনানী থানায় তেমনি একটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগের মদন পুষ্ট ও সিন্ডিকেটের সহযোগী রুল ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স নম্বর ২৫৫১ এর মালিক রুবেল হোসেন।
যেখানে বাদীর সাথে ফখরুল ইসলামের কোন পূর্ব পরিচয় ব্যবসায়িক সম্পর্ক নাই। মামলার এজাহার মতে, বিবাদীর প্রতিষ্ঠান বারিধারা জে- ব্লক, আর বাদীর অফিস শান্তিনগর, অথচ দুই অফিসের কোনোটিতেই অর্থ লেনদেন না হয়ে সমস্ত টাকা লেনদেন হয়েছে বনানীস্থ আহমেদ ইন্টারন্যাশনালে। যার কর্ণধার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বেনজির আহমেদ।
এজাহারে যেসব কর্মীর নাম উল্লেখ রয়েছে বিএমইটি-র তথ্য অনুযায়ী সেসব কর্মী ১/১১ এর কুশীলব ১০০ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য লেঃ জেঃ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ৫ এম ইন্টারন্যাশনাল যেকে মালয়েশিয়া গমন করেছেন। অতএব জনাব ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি যে উদ্দেশ্যমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট সেটি সহজেই অনুমেয়।
আপনারা অবগত আছেন যে, ফখরুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, সোস্যাল মিডিয়াসহ সর্বক্ষেত্রে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি যেন অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই গায়েবী মামলার মত, সিন্ডিকেটের হোতাদের ইন্ধনে বাদী এহেন মিথ্যা, বানোয়াট ও হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করেছে। আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি যে আসন্ন বায়রা নির্বাচনকে বানচাল ও ভন্ডুল করার জন্য এবং সিন্ডিকেটের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখার জন্য ফখরুল সহ সিন্ডিকেট বিরোধী অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আরও মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করার আশঙ্কা করছি।
আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, যাতে করে কুচক্রীমহল ভবিষ্যতে এ ধরনের নোংরামি ও ষড়যন্ত্র কর্মকাণ্ড থেকে থেকে বিরত থাকে এবং ভবিষ্যতে বায়রার সম্মানিত সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই ও সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধ করছি।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রচার করছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন স্বত্তেও পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের কতিপয় উপদেষ্টার কুটনৈতিক ক্ষেত্রে অপেশাদার ও নতজানু কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সরকার রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেকশনের নিমিত্তে ১০টি অবাস্তব শর্ত উল্লেখ পূর্বক চিঠি প্রদান করেন আমরা মনে করি সিন্ডিকেট কারীরা তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্যই মালয়েশিয়ান সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার যোগসাজসে বাংলাদেশ সরকারকে এই ধরনের ক্রাইটেরিয়া প্রদান করে। মূলত তাদের এই সকল ক্রাইটেরিয়া লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। অতীতের মত সিন্ডিকেটকারীরা তাদের পছন্দ মত রিক্রুটিং এজেন্সিই সিলেকশন করবে।
আপনারা জানেন, নেপাল সরকার ইতিমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে। নেপালের মতো ক্ষুদ্র দেশ যদি মালয়েশিয়ার ক্রাইটেরিয়া প্রত্যাখ্যান করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় মালয়েশিয়া প্রদত্ত অযৌক্তিক শর্তগুলো অংশীজনদের সাথে আলোচনার না করে পরের দিনই অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর ২০২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি সমূহকে আবেদনের নির্দেশ প্রদান করেন। যেখানে উল্লেখ রয়েছে ১০ হাজার বর্গফুটের অফিস। বিগত ৩ বছর একই ঠিকানায় অবস্থান সাপেক্ষে ন্যূনতম তিন হাজার কর্মী প্রেরণের প্রমানক সহ ভিন্ন ভিন্ন দেশের নিয়োগকর্তা থেকে প্রশংসাপত্র থাকতে হবে। অধিকতর নিজের নামে ও তত্তাবধানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ ইত্যাদি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আবেদন করতে হবে, যা কিনা অযৌক্তিক ও অবাস্তব। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে কর্মীদের অভিবাসন খরচ বৃদ্ধি পাবে।
এতে করে হাতেগোনা দুই-একটি এজেন্সি ব্যতীত সিংহভাগ এজেন্সির পক্ষে এসব ক্রাইটেরিয়া পূরণ কোনক্রমেই সম্ভব নয়। এহেন অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করা হলে গোটা জনশক্তি রপ্তানি সেক্টর মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে অর্থাৎ যেটি হবে পূর্বের সিন্ডিকেট সমূহের আধুনিক ভার্সন।
এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং ১০ ক্রাইটেরিয়া প্রত্যাহারের ব্যাপারে লিখিত চিঠি প্রদান করেছি। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি যাতে করে সরকার পেশাদার কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত করা হয়।
বিএমইটি’-এ বহির্গমণ ছাড়পত্র জটিলতায় একমাত্র ভরসা সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জোর দাবি, সরকার যেন পূর্বের ন্যায় ১-২৪ পর্যন্ত সত্যায়ন বিহীন বহির্গমণ ছাড়পত্র প্রদান সাপেক্ষে সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণের জটিলতা নিরসন করা হয়।

